শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফুল খেলবার দিন নয় আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফুল খেলবার দিন নয় আজ

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব হওয়ার এক দিন পর গতকাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা বার্তার ফুল নিয়ে আসা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাদের শুভেচ্ছা জানাতে ফুল নিয়ে এসেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আজ ফুল খেলবার দিন নয়। আমরা গণতন্ত্রের জন্য যে সংগ্রাম-লড়াই করছি, সেই সংগ্রামে আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। সারা বাংলাদেশে এখন একটা ত্রাসের রাজত্ব চলছে। গণতন্ত্রের নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা হয়েছে। নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই আমরা আনন্দিত কিংবা উচ্ছ্বসিত হতে পারছি না।’ গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। সকাল থেকেই ফুল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীর ঢল নামে। মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান তারা। দিনভর নেতা-কর্মীর পদচারণে মুখর ছিল নয়াপল্টন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় এর বিরুদ্ধে ফাঁকে ফাঁকে দুই দফা বিক্ষোভ মিছিলও করেন নেতা-কর্মীরা। যুবদলের পক্ষ থেকে একটি ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আরেকটি মিছিল বের করা হয়। রিজভী আহমেদ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন কমিটিতে তিনজনের নাম ঘোষণা করেছেন। আমাকে মহাসচিব, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মিজানুর রহমান সিনহাকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে আবেগ-উচ্ছ্বাস আছে। অনেকেই ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আজ ফুল খেলবার দিন নয়।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, যখন চেয়ারপারসন দলের নতুন কর্মকর্তাদের নাম ঘোষণা করলেন, সেই সময় মিথ্যা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শুধু তাকেই নয়, সব মিলিয়ে ২৮ জন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়। যে সময়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে, তখন দেশজুড়ে অবরোধ ছিল। এই মামলা বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা হয়েছে। এতে বেগম খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে এ মামলাটি হয়েছে।’

সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দাবি করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘এজন্যই সরকার মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে গুম করে, খুন করে, নির্যাতন করে, জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। যারা যুগে যুগে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়েছেন, তাদের এভাবে দমিয়ে রাখা যাবে না। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়াকে তো পারা যাবেই না। বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীই এসব জুলুম-নির্যাতনের পরেও নতিস্বীকার করবে না।’ প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে সংলাপ-সমঝোতার পথে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বিএনপির কাউন্সিলে বেগম খালেদা জিয়া যে আহ্বান জানিয়েছেন, আমিও সরকারকে সে আহ্বান জানাতে চাই। আসুন আর প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, নির্যাতন-নিপীড়ন বাদ দিন। অতি দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন। চলমান রাজনৈতিক সংকট সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে দূর করার উদ্যোগ নিন।’

শিগগিরই বিএনপির অন্য কমিটিগুলো হবে কিনা— জানতে চাইলে মির্জা আলমগীর বলেন, কমিটি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই অবশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিবুর রহমান হাবিব, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামিম, আসাদুল করীম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর