মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে নিহত ৬

ব্যাপক সংঘর্ষ, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশ, রণক্ষেত্র

সাইদুল ইসলাম ও রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে নিহত ৬

এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলাসহ ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র দুই রকম ভাষ্য দিয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে গণ্ডামারা ইউনিয়নের হাজীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশে প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করায় এলাকাবাসীর মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রের কারও মতে নিহতের সংখ্যা ছয়, আবার কারও মতে আট। সংঘর্ষের সময় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। জেলা পুলিশ সুপার কে এম হাফিজ আকতার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি। তবে তিনি পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামসুজ্জামান তিনজন নিহতের খবর শুনেছেন বলে জানান। পুলিশ ও আনসার সদস্য ১১ এবং স্থানীয়দের মধ্যে ৯ জন আহতের খবর সরকারি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। গুলিবিদ্ধ ও মারাত্মক আহতদের দ্রুত চিকিৎসার্থে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পথে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ কারণেই নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় বলে স্থানীয়রা জানান। গুরুতর আহত অবস্থায় ১০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা যায় চমেকসূত্রে। স্থানীয় সূত্রমতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন— মুর্তুজা আলী (৫২), আঙ্গুর আলী (৪৫), জাকের আহমেদ (৩৫), গোলাম মোহাম্মদ (৪০), বাদশা (৩০)। এ ছাড়া নিহত মহিলাসহ অন্যদের নাম রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুত্ কেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে এলাকাবাসীর এ সংঘর্ষ চলার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহির আলম বলেন, বাঁশখালীর সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেকেই জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। অনেকেই গুরুতর আহত। তবে তাদের নাম এখনো জানা যায়নি। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এম হাফিজ আকতার বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশে জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করায় পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা করে এলাকাবাসী। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়লে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এমনকি পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যও আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। নিহতের বিষয়ে শুনেছি। কিন্তু নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’ তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও বাঁশখালী থানার ওসি স্বপনকুমার মজুমদারকে ফোনে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই বাঁশখালীতে এস আলমের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে স্থানীয়ভাবে জায়গা দখলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এস আলমের পক্ষে নেপথ্যে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন জামায়াত নেতা ও স্থানীয় গণ্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ উল্লাহ, কাজী মো. মোজাম্মেল, আওয়ামী লীগ নেতা ও শীলকূপ ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক সিকদার, নুরুল মোস্তফা সংগ্রাম, হারুনুর রশিদ, প্রকল্পের সমন্বয়কারী নাছির উদ্দিন, আবু বক্কর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শামসুল আলম মাস্টার। এ প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী নাছির উদ্দিন একসময় যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তবে স্থানীয়দের পক্ষে অনড় অবস্থানে আছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী। এদিকে মানবাধিকার তথ্য পর্যবেক্ষণ সোসাইটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কমল বড়ুয়া বিজয় পুলিশের গুলিতে এক পরিবারের তিনজনসহ মোট আটজন নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে এক বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি অভিযোগ করে বলেন, এস আলম গ্রুপ ও পুলিশ এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ময়নাতদন্ত না করেই লাশ গুম করে রাখে। উল্লেখ্য, বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারার উপকূলীয় এলাকায় এস আলম গ্রুপ ও চায়না সেফকো কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পক্ষে-বিপক্ষে কয়েক মাস ধরে এলাকাসাীর মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। প্রকল্পের পক্ষে-বিপক্ষে এলাকাবাসী মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। একটি পক্ষ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিরোধে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জোর প্রতিবাদ চালাচ্ছে। এর আগেও ১৮ মার্চ এ নিয়ে দুই পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল।

বিচারবিভাগীয় তদন্ত চান খালেদা : চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৫ জন নিহত ও বহু মানুষ হতাহতের ঘটনায় বিচারবিভাগী তদন্ত দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল রাতে চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। বিএনপি প্রধান বলেন,  আমি এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

কথায় কথায় প্রতিবাদী মানুষের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা ও আহত করা এখন এক স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি করছি। আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করছি। তাদের সুচিকিত্সার বন্দোবস্ত করার দাবি জানাচ্ছি। অনুরুপ বিবৃতি দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সর্বশেষ খবর