বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

এমপি রানা ও তিন ভাইসহ ১০ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ

মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

এমপি রানা ও তিন ভাইসহ ১০ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত (চার্জশিট) আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ পলাতক ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা এবং তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জেলার সাবেক ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অপর আসামিরা হলেন কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চানে, নুরু, সানোয়ার হোসেন ও দাঁতভাঙা বাবু। এরা পলাতক      রয়েছেন। এ ছাড়া আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, ফরিদ মিয়া ও সমীর টাঙ্গাইল জেলহাজতে আটক রয়েছেন। ৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজপাড়া এলাকার নিজ বাসার কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা করেন। ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয় আনিসুল ইসলাম রাজাকে। একই অভিযোগে মোহাম্মদ আলী নামে আরও একজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গত ২৪ আগস্ট গ্রেফতার করে। তারা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের চার ভাই যথাক্রমে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান কাঁকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা জড়িত রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি রাজা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি তাকে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা দায়িত্ব দেন ফারুক আহমেদকে আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে কলেজপাড়ায় তার একটি প্রতিষ্ঠানে ডেকে আনার জন্য। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাওয়ার সময় পথেই তার (রাজা) সঙ্গে ফারুক আহমেদের দেখা হয়। তিনি তখন নিজের রিকশা ছেড়ে ফারুক আহমেদের রিকশায় ওঠেন এবং তাকে এমপি রানার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে ফারুক আহমেদের কথা হয়। একপর্যায়ে ফারুক আহমেদকে ওই পদে প্রার্থী না হওয়ার অনুরোধ করেন এমপি রানা। ফারুক আহমেদ এতে রাজি হননি। কথার একপর্যায়ে সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে ফারুক আহমেদকে গুলি করা হয়। এ সময় অন্যরা তার মুখ চেপে ধরেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর প্রভাবশালী নেতা এমপি রানার নির্দেশে সেখানকার রক্ত মুছে ফেলা হয়। পরে একটি অটোরিকশায় ফারুক আহমেদের মরদেহ নিয়ে আসামি রাজাসহ দুজন দুই পাশে বসেন। তারা ফারুক আহমেদের বাসার কাছে লাশ ফেলে রেখে আসেন। জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও সানিয়াত খান বাপ্পা দেশ ত্যাগ করলেও এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও সহিদুর রহমান খান মুক্তি দেশেই অবস্থান করছেন। ঢাকা ও টাঙ্গাইলে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ এ মামলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলি ও আসামিদের ফাঁসি দাবি করেছেন।

সর্বশেষ খবর