শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

অফশোর কোম্পানির সুবিধা নেন ক্যামেরন

চাপে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট

প্রতিদিন ডেস্ক

অফশোর কোম্পানির সুবিধা নেন ক্যামেরন

অবশেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন স্বীকার করেছেন, তিনি ও তার স্ত্রী সামান্থা ক্যামেরন তার বাবা ইয়ান ক্যামেরনের অফশোর ট্রাস্টের (তথাকথিত কোম্পানি) শেয়ারের মালিকানা পেয়েছিলেন এবং সেখান থেকে সুবিধা নিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে নিজের আয়কর বিবরণী প্রকাশ করার আগে গতকাল তিনি এই সুবিধা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেন। এদিকে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে চাপে পড়েছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিসিও মাক্রি। তবে গত বুধবার ক্যামেরন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, তার কোনো অফশোর অ্যাকাউন্টও নেই। গতকাল মূলত ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংস নামে অফশোর কোম্পানির ব্যাপারে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে ক্যামেরন বলেন, ‘সামান্থা (ক্যামেরনের স্ত্রী) ও আমার একটি যৌথ হিসাব ছিল যেখানে ব্লেয়ারমোর ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের ৫ হাজার শেয়ার ছিল। ওগুলো আমরা ২০১০ এর জানুয়ারিতে ৩০ হাজার পাউন্ডের কাছাকাছি দামে বিক্রি করে দেই। লভ্যাংশ থেকে আমি করও পরিশোধ করেছি। তবে এই লাভ মূলধনী করের সীমার মধ্যে না পড়ায় আমি স্বাভাবিক নিয়মেই কর পরিশোধ করি।’ তিনি আরও বলেন, বিক্রি করা শেয়ার থেকে কিছু মুনাফাও এসেছিল, কিন্তু সেই লভ্যাংশ ক্যাপিটাল গেইন্স ট্যাক্স ভাতার চেয়ে কম ছিল, ফলে যুক্তরাজ্যের অন্য সব সাধারণ করের মতোই সেটি পরিশোধ করা হয়। পানামা পেপারস নামে পরিচিত ধনী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের কর ফাঁকির লাখ লাখ গোপন দলিলপত্র ফাঁস হওয়ার পর যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, সেটি এখন অনেকের ভুল বোঝাবুঝির কারণেও হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্যামেরন। নিজের সাফাই গেয়ে ক্যামেরন বলেছেন, ব্লেয়ারমোর সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এটি হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটি তা নয়। বরং একটি এক্সচেঞ্জ কন্ট্রোল হিসেবে এটি তৈরি হয়েছিল। এরপর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে আরেক দফা বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতেও কোনো অফশোর বিনিয়োগ থেকে তিনি বা তার পরিবার লাভবান হবেন না। প্রয়াত বাবা ও তার কোম্পানি নিয়ে চলমান সমালোচনায় ‘কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে’ জানিয়ে ক্যামেরন বলেন, ‘আমার কিছুই লুকানোর নেই। আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্বিত, তিনি যা করেছেন, যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন সবকিছুর জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি ও প্রতিদিন তার অভাব বুঝতে পারি এবং কোনোভাবেই তার নামকে কাদার মধ্যে গড়াগড়ি খেতে দেখতে পারি না।’

এদিকে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমন্বিত পদক্ষেপ থেকে অফশোর ট্রাস্টকে পৃথক রাখার জন্য ক্যামেরন ব্যক্তিগতভাবে তদবির চালিয়েছিলেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপির এক খবরে জানানো হয়। তিনি ইউরোপীয় কাউন্সিলের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট হারম্যান ভ্যান রমপুয়েকে লেখা এক চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন, অফশোর ট্রাস্টগুলোকে কোম্পানির মতো করে না দেখার জন্য। চিঠিতে ক্যামেরন লিখেছিলেন, ‘কোম্পানি ও ট্রাস্টের মধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে, তাকে আমাদের স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। কোম্পানিগুলোর সম্ভাব্য অপব্যবহার রুখতে নেওয়া পদক্ষেপ সাধারণভাবে সবার জন্য যথাযথ না-ও হতে পারে।’পানামা পেপারসের নথিতে জানা গেছে, ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংসের অধিকর্তাদের যাতে ব্রিটেনে কোনো রকম কর দিতে না হয়, সে জন্য কোম্পানির পরিচালকরা বাহামার স্থানীয় অধিবাসীদের দিয়ে দাফতরিক নথিপত্রে সই করাতেন।নতুন এ তথ্যেই বিপাকে পড়তে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।

চাপে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট: অন্যদিকে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিসিও মাক্রি গতকাল ফেডারেল প্রসিকিউটরের কাছে তার আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার সময়ও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। পানামা পেপারসে তার নাম আসায় বৃহস্পতিবারই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, বাহামাস ও পানামায় দুটি অফশোর কোম্পানির পরিচালক পদে রয়েছে মাক্রির নাম। ২০০৭ সালে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনাস আইরেসের মেয়র হওয়ার সময়, এমনকি গত ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময়ও মাক্রি এ কোম্পানিগুলোয় তার অংশীদারি থাকার কথা আয়করের কোনো কাগজপত্রে উল্লেখ করেননি। গতকাল আদালতে যাওয়ার আগে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে মাক্রি বলেন, ‘আমি জানি পানামা পেপারসে যাদের নাম এসেছে, তাদের একাংশের ওপর ওই অভিযোগ আনা হয়েছে, আর এতে আমাকে টেনে আনা হয়েছে। আমি আবারও একবার বলতে চাই, আমি সুস্থির রয়েছি, আমি আইনের প্রতি আস্থাশীল। আমি সত্য বলেছি এবং আমার লুকানোর কিছুই নেই।’ তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন বলেও তিনি নিশ্চয়তা দেন। বিবিসি

সর্বশেষ খবর