রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

পরিবারের কেউ বাদী হয়নি নাজিম হত্যায়

আলী আজম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিম উদ্দিন খুনের ঘটনায় করা মামলায় বাদী হয়নি তার পরিবার। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানার এসআই নুরুল ইসলাম      বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ১৮-২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। এদিকে, নাজিমের একটি ডায়েরি খুঁজে পেয়েছেন মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে দেখা গেছে, সরকারের বিভিন্ন কাজের প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও করতেন নাজিম। চাঞ্চল্যকর বিবেচনায় মামলাটি দ্রুতই কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নাজিমকে খুন করার পরিকল্পনা আগে থেকেই নিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। খুনের জায়গাও ঠিক করা হয়েছিল। জবিতে ক্লাস শেষ করে বন্ধু সোহেলের সঙ্গে হেঁটে গেণ্ডারিয়ার বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তার পিছু নেয়। কিন্তু জবি, লক্ষ্মীবাজার ও একরামপুরের ব্যস্ত সড়কে বিষয়টি আঁচ করতে পারেনি। একরামপুর মোড়ে তিন দিকে যাওয়ার রাস্তা থাকায় দুর্বৃত্তরা ওই স্থানটি বেছে নেয়। সেখানেই নাজিমকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পরই দুর্বৃত্তরা সেখান থেকে হেঁটে মুর্গিটোলার রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই রাস্তায় আগে থেকে দুর্বৃত্তদের জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছিল। জানা গেছে, খুন হওয়ার দুই মাস আগে সিলেট থেকে ঢাকায় আসেন নাজিম। জবির সান্ধ্যকালীন এলএলএম কোর্সের ৬ষ্ঠ ব্যাচের বি সেকশনে ভর্তি হয়েছিলেন। মাত্র এক মাস ক্লাস করেছেন। সেখানেই পরিচয় হয় সোহেলের সঙ্গে। তার বাড়িও সিলেটে। তার সঙ্গে গেণ্ডারিয়ার রজনী চৌধুরী রোডের ২৯/ঘ নম্বর বাড়ির ৭ম তলায় বাসাও নেন। অনলাইনে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন নাজিম। নিহত নাজিমের ভাতিজা জাহিদুল হক সুমন বলেন, মামলা দেখাশুনা করার মতো নাজিমের পরিবারে কোনো লোক নেই। এ জন্য তার পরিবার মামলার বাদী হয়নি। পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের সিনিয়র এসি মোহাম্মদ নুরুল আমীন বলেন, নাজিমের পরিবার মামলা করতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই, সিআইডি মাঠে নেমেছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পেশাদার খুনিরা জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাজিমের মোবাইল ও ফেসবুক পেজ যাচাই করে দেখা হচ্ছে। নাজিম জবি থেকে বের হওয়ার পর ঘটনাস্থল একরামপুর মোড় পর্যন্ত কোথাও সিসি টিভি আছে কিনা তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। ভিডিও পেলে তা যাচাই করা হবে।

 নাজিমের বন্ধু সোহেল তদন্তে সহযোগিতা করছেন। তদন্তের স্বার্থে নাজিমের গ্রামের বাড়ি সিলেটও যাওয়া হবে। সেখানে নাজিমের চলাফেরা ও কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হবে। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, নাজিম হত্যাকাণ্ডে উগ্রবাদী সংগঠন ও তার ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয়টি সামনে রেখে তদন্ত চলছে। নাজিম হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারকারী আল-কায়েদার সাইট ইন্টেলিজেন্সে প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতীতেও যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার সবকটিই বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী দায় স্বীকার করেছিল বলে দাবি করেছিল সাইট। কিন্তু প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষে সবকিছু পরিষ্কার করে বলা যাবে। প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার এমরামপুর মোড়ে নাজিম উদ্দিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাতে সূত্রাপুর থানার এসআই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর