সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

আবাসন খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল দাবি রিহ্যাবের

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবাসন খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব বলেছে, সরকার ক্রেতাদের অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দিলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। দুদকে ক্রেতা-বিক্রেতাকে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকায় আবাসন খাতে বিনিয়োগকারী নেই। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—রিহ্যাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন। ব্যাংক ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশ কিছু ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ সুবিধা দিতে চায়। তবে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দেয় সরকারি ব্যাংক ও হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন। কিন্তু তাদের কাছে এখন কোনো তহবিল নেই। এমন প্রেক্ষাপটে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ৩০-৩৫ বছর কিস্তিতে ঋণ সুবিধা চালুর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা তহবিল গঠন করতে হবে।

প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে তিনি আবাসনশিল্প রক্ষার্থে ‘আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭-এ রিহ্যাবের দাবি ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের ঊর্ধ্বতন  সহ-সভাপতি রবিউল হক, প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন, সহ-সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান, প্রকৌশলী সরদার মো. আমিন, ড. এন জোহা প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, দেশে বৈধভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে দায়মুক্তি চেয়েছে রিহ্যাব। সংগঠনটি আগামী বাজেটে আবাসনশিল্প রক্ষায় সরকারের কাছে পাঁচ দফা সুপারিশ করে বলেছে, শহর এলাকায় ৫ বছর ও শহরের বাইরে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হোক। দেশের বেসরকারি আবাসনশিল্প কয়েক বছর ধরে মন্দাবস্থার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। সমগ্র আবাসন খাতের বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৮০ ভাগ। আর নতুন প্রকল্প গ্রহণের হার কমে গেছে প্রায় ৯০ ভাগ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের আবাসন খাত সামনে ভয়ানক পরিণতির দিকে যাবে। এজন্য আসন্ন বাজেটে ভ্যাট ও উেস কর থেকে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫ বছরের জন্য অব্যাহতি প্রদান, বিনাশর্তে ১০ বছর কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ, সিঙ্গেল ডিজিটে ৩০-৩৫ বছর কিস্তিতে ঋণ সুবিধা চালু করা হোক। এ ছাড়া আবাসনশিল্পে অন্যান্য দেশের মতো শিল্পঋণ সুবিধা প্রচলন, নগদ ও খুচরা পণ্য কেনায় ভ্যাট ও উেস কর বন্ধ, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৪ ভাগ কমানো, সেকেন্ডারি মার্কেটের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ১ ভাগ ও ২ ভাগ করে অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। আলমগীর শামসুল আলামিন আরও বলেন, ‘ফ্ল্যাটের নামমাত্র রেজিস্ট্রেশন ব্যয় নির্ধারণ করে সেকেন্ডারি বাজারব্যবস্থার প্রচলন করা, নগরায়ণের বিকেন্দ্রীকরণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শহর এলাকায় ৫ বছর এবং শহরের বাইরের এলাকায় ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ দিয়ে উৎসাহিত করতে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি।’ রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট জানান, রিহ্যাবের ১ হাজার ১৩৮টি সদস্য প্রতিষ্ঠান সরকারের সহযোগী হিসেবে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিগত ২৩ বছরে আবাসন খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা অসামান্য অবদান রেখেছেন। বছরে ১৫ থেকে ১৭ হাজার ফ্ল্যাট সরবরাহ করেছে এসব প্রতিষ্ঠান। তিনি আরও বলেন, দেশের আবাসন খাত ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে; এর মধ্যে ৩৫ হাজার প্রকৌশলী, স্থপতি ও উচ্চতর ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত। এ খাত জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ১৫ ভাগ অবদান রাখছে। ২৬৯ প্রকার লিংকেজ শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখছে। রিহ্যাবের পাঁচ দফা বাজেট সুপারিশে বলা হয় : সরকারি ঘোষণাপূর্বক সিঙ্গেল ডিজিট সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বল্প আয়ের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনসাধারণের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে পুনরর্থায়ন পুনঃপ্রচলন করতে হবে। অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিল্পঋণসহ শিল্প সুবিধা প্রচলন করতে হবে। এ প্রস্তাবের সঙ্গে নতুন অর্থবছরের বাজেটের জন্য রিহ্যাব তাদের ১৩ দফা নীতিগত প্রস্তাবনায় বলেছে : বর্তমানে জমি, ভূমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। এটা অনেক উচ্চ কর। তাই ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে গেইন ট্যাক্স ৪ শতাংশ করা হোক। প্লট ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে পাঁচ প্রকারে মোট ১৪ শতাংশ কর নেওয়া হয়। এটা কমিয়ে রেজিস্ট্রেশন-সংক্রান্ত কর ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হোক। বর্তমানে উদ্যোক্তারা চূড়ান্ত কর দায়মুক্তি না থাকায় হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এলাকাভেদে আবাসিক ও অনাবাসিক করহার কমিয়ে আনা হোক। আবাসনশিল্পের জন্য বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর—মূসক বা ভ্যাট নতুনভাবে আরোপ করা যাবে না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—রাজউক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—সিডিএ আওতাভুক্ত ও বহির্ভূত এলাকায় সব জমির ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশে আরোপিত ৪ ও ৩ শতাংশ হারের কর প্রত্যাহার করতে হবে। বিনা শুল্কে সকল প্রকার ভবনের অগ্নিনিরাপত্তামূলক যন্ত্রপাতি আমদানিকরণের সুযোগ দিতে হবে। পরিবেশসম্মত নগরায়ণ নিশ্চিত করতে বর্তমানে কোনো আইন, বিধি ও দিকনির্দেশনা নেই। তাই লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন—লিড সার্টিফাইড ভবনের জন্য আয়কর রেয়াত প্রদান করা হোক। বর্তমানে দেশে আবাসনশিল্পের কোনো সেকেন্ডারি বাজার নেই। তাই নামমাত্র রেজিস্ট্রেশন ব্যয় নির্ধারণ করে সেকেন্ডারি বাজারব্যবস্থা প্রচলন করতে হবে। একই সঙ্গে আবাসনশিল্পের জন্য নির্মাণকালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হারে বিদ্যুৎ, পানির ফি নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছে রিহ্যাব।

সর্বশেষ খবর