বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
রাজনীতি

পদ ছাড়তে গড়িমসি বিএনপি নেতাদের

শফিউল আলম দোলন

পদ ছাড়তে গড়িমসি বিএনপি নেতাদের

অতিরিক্ত পদ ছাড়তে গড়িমসি করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছেড়ে দিলেও অন্যদের এখনো কোনো খবর নেই। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব থেকে শুরু করে সর্বশেষ ঘোষিত যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের কেউই এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। দলের গঠনতন্ত্রে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি যুক্ত হলেও চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনা সংক্রান্ত অপর একটি ধারার উল্লেখ থাকায় বেশির ভাগ নেতাই এখন তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কিছুটা সময় লাগলেও ‘এক নেতা এক পদের’ এই নীতি অমান্য করার কোনো সুযোগ কারও নেই বলে জানালেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গঠনতন্ত্রে সংযুক্ত এই ধারাটি অবশ্যই কার্যকর হবে। তবে চেয়ারপারসন যাকে অতিরিক্ত যে পদে প্রয়োজন মনে করবেন তাকে সেখানে রাখতে পারেন। কাজেই বিশেষ বিবেচনার বিষয়টি একান্তভাবেই চেয়ারপারসনের এখতিয়ার। তবে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নেতাদের নানা বিষয় বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সবাই ধীরে ধীরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন রিজভী আহমেদ। জানা গেছে, মূল পদের বাইরে অতিরিক্ত সব পদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ছেড়ে দেবেন। তাকে বগুড়া ও ফেনী জেলা কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছিল। এসব পদ ছাড়ার ব্যাপারে গঠনতান্ত্রিক কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও দেশব্যাপী দলীয় নেতাদের ‘এক নেতার এক পদে’ থাকার বিষয়ে উৎসাহিত করার লক্ষ্যেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে দলের সহদফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম জানান, এ ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। গঠনতন্ত্রে সংযুক্ত নতুন এ ধারা অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার চার দিনের মাথায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে অতিরিক্ত এই পদ দুটি থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দেন মির্জা ফখরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ গঠনতন্ত্রের সংশোধিত এ ধারাটি কর্যকরের উদ্দেশ্যেই অতিরিক্ত পদগুলো তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। জানা গেছে, বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে আনীত সংশোধনী অনুযায়ী দলের ভিতরে এক নেতা একটির বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারবেন না। ‘এক ব্যক্তির এক পদ’-এর ধারা-সংবলিত বিধানের কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারাও অন্য কোনো পদে থাকতে পারবেন না। একইভাবে যারা জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকবেন, তারা অন্য কোনো পদে থাকতে পারবেন না। তবে চেয়ারপারসন বিশেষ বিবেচনায় কোনো নেতাকে তার মূল পদের বাইরেও অতিরিক্ত কোনো পদে রাখতে পারবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই মূলত গঠনতন্ত্রে এই সংশোধনী আনা হয়। এ প্রসঙ্গে দলের একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি চূড়ান্ত করা হলেও সেখানে কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে। প্রথমত, কেন্দ্রীয় কমিটির সব সম্পাদকীয় পদসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এর আওতায় পড়বেন কিনা, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। তাছাড়া গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, চেয়ারপারসন বিশেষ ক্ষেত্রে তার বিশেষ বিবেচনায় এটা শিথিল করতে পারবেন। সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকা ও চেয়ারপারসনের এই বিশেষ বিবেচনার সুযোগটি কাজে লাগাতে এখন লবিং-তদবিরও শুরু করেছেন অতিরিক্ত পদধারী কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে রেখেছেন। বিশেষ করে যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগর, খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী জেলা, লায়ন আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে রয়েছেন। অন্যদিকে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। নতুন সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে— ফজলুল হক মিলন গাজীপুর জেলা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর, আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম মহানগরের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে যারা নতুন করে দায়িত্ব পেয়েছেন— কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদের আগের পদগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের অনেকেই আবার বিভিন্ন জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্বে রয়েছেন। এসব অতিরিক্ত পদ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে এদের অনেকেই চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনার দিকে তাকিয়ে আছেন বলে জানা যায়। এদিকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম ঢাকা মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু মূল পদের বাইরে ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে— রাবেয়া চৌধুরী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালী জেলা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে— আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর, আহমেদ আজম খান টাঙ্গাইল, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম খুলনা জেলা, আবদুল মান্নান ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই নতুন স্থায়ী কমিটি আবার কেউ দলের পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছেন।

সর্বশেষ খবর