বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
রিজার্ভ হ্যাকিং

অর্থ ফেরতে সিদ্ধান্ত দেয়নি ফিলিপাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ফিলিপাইনে গিয়ে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা অনুরোধ করেছেন আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং আইন অনুসারে জড়িত রিজাল ব্যাংককে জরিমানা করে অর্থ ফেরত দেওয়া হোক। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন—আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ আপাতত তাদের জরিমানা করছে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরসিবিসির আরও ছয় কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করে সিনেট কমিটির কাছে বক্তব্য দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের জুপিটার স্ট্রিট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দিগুইতো। গতকাল সিনেট কমিটির শুনানিতে তিনি এ নাম প্রকাশ করেন। শুনানিতে উঠে আসে ৯ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংক থেকে আরসিবিসিতে অর্থ আসার পর তিন দফায় জরুরি মেসেজ পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সন্দেহজনক হিসেবে এ লেনদেন আপাতত বন্ধ করার অনুরোধ জানালেও দিগুইতো তা করেননি। জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সে দেশে যান। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল—এএমএলসি, সিনেট কমিটির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন। বৈঠকে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে রিজাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করে সব অর্থ ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা। বাংলাদেশের এ অনুরোধে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত তারা জানায়নি। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ক্যাসিনো ও রেমিট্যান্স লেনদেন কোম্পানিকে জরিমানা করার অনুমতি চেয়ে এএমএলসি আদালতে আবেদন করেছে। এদিকে ফিলিপাইনের সিনেট ব্লু রিবন কমিটির পঞ্চম দফায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে অংশ নিয়ে আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক দিগুইতো ঘটনার বিস্তারিত বিরবণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ব্যাংকের আঞ্চলিক বিক্রয় পরিচালক ব্রিজিত ক্যাপেনা ও নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট রাউল ট্যানসহ আরও চারজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারাই আমাকে বাধ্য করেছেন রেমিট্যান্সের অর্থ ছাড় করার জন্য। পরে তাদের নির্দেশে ওই অর্থ পাঁচজনের অ্যাকাউন্ট থেকে ছাড় করা হয়।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়া অর্থ দুই দফায় হ্যাকারদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথম দফায় সাড়ে চার মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ফেরত দেন হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত ক্যাসিনো মালিক কিম ওং। দ্বিতীয় দফায় তিনি আরও আট লাখ ডলার ফেরত দেন। তিনি আগামী এক মাসের মধ্যে আরও প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া আরেকটি রেমিট্যান্স লেনদেন কোম্পানি ফিলরিমের কাছে ১৭ মিলিয়ন ডলার রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সেই অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার এখনই উদ্ধার করা যাবে বলে ফিলিপাইনের সিনেট ব্লু রিবন কমিটি জানিয়েছে। দুই দফায় উদ্ধার করা অর্থের একটি অংশ ম্যানিলায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই অর্থ এখনো সেখানেই রয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি বা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে যেভাবে অর্থ গেছে সেভাবেই ফেরত আনতে। ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ ফেডারেল ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ জমা দিক। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করছে। তাদের সঙ্গে সমঝোতাও আছে। চুরি হওয়া অর্থের একাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিপাইন এএমএলসি কর্তৃপক্ষ বাকি অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এ অর্থ কীভাবে পাবে তা নিশ্চিত নই।

তবে যেভাবে অর্থ গেছে সেভাবেই আসবে। বাংলাদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিলেও আমরা পেয়ে যাব। বিষয়টি সে দেশের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।’

সর্বশেষ খবর