রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

এনজিও স্টাইলে সংরক্ষণ করা হচ্ছে নারী কোটা

বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি চলতি মাসেই

শফিউল আলম দোলন

কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার তৃণমূল থেকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নিচ্ছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেলা পর্যায়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নাম বাছাই করছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই। জেলা-উপজেলা থেকেও এবার নেতা আনা হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তবে এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক স্থান পেতে পারেন নারী নেত্রীরা। রাজনীতিতে নারীসমাজের অংশগ্রহণকে আরও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এবারের নির্বাহী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় নারী নেতৃত্বের কোটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে অনেকটা ‘এনজিও’ স্টাইলে। চলতি মাসেই বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেন দলীয় প্রধান। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনেরও প্রত্যাশা চলতি মাসেই পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণার। এ সম্পর্কে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ম্যাডাম এ নিয়ে কাজ করছেন। আশা করছি চলতি মাসেই দলের পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটিসহ স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ এর আগে ৯ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত দলের নয় বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে দুজনই নারী। নতুন স্থায়ী কমিটিতেও কমপক্ষে দুজন নারী সদস্য রাখার পক্ষে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রবীণ নারী নেত্রী। নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন ১২ জনেরও বেশি মহিলা নেত্রী। তা ছাড়া শুধু ঢাকাভিত্তিক না রেখে সারা দেশ থেকেই নতুন ও অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা স্থান করে নিচ্ছেন নির্বাহী কমিটিতে। এটা দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে এবং আগামী দিনের সব সাংগঠনিক কর্মসূচি তারা সফল করে তুলবেন বলেই আশা প্রকাশ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.)। তিনিও আশা করছেন, নির্বাহী কমিটির সঙ্গে সঙ্গে নতুন স্থায়ী কমিটির তালিকাও ঘোষণা করতে পারেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘চেয়ারপারসন চেষ্টা করছেন নেতাদের কাজের মূল্যায়নের। যাদের নিয়ে কমিটি করছেন আশা করি আগামী দিনে তারা সাফল্য বয়ে আনবেন।’ তবে নির্বাহী কমিটির বেশির ভাগই একেবারে আনকোরা বা নতুন না নেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন দলের একজন সহ-দফতর সম্পাদক। তিনি বলেন, সব আনকোরা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হলে বিগত আন্দোলনে তো কর্মসূচি ঘোষণার পরে (ঢাকার) নেতারা পালিয়ে ছিলেন। এবার যারা কমিটিতে আসতে শুরু করেছেন তারা পালাবেন কর্মসূচি ঘোষণার আগেই। যুগ্ম-মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে বিগত আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ও অবদান সম্পর্কে বিশ্লেষণেরও আহ্বান জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশান কার্যালয়ভিত্তিক এই নেতা। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম বলেন, ‘বিগত আন্দোলনে মামলা আর গ্রেফতারের শিকার হওয়া ছাড়া আর তেমন কোনো ভূমিকাই আমরা ঢাকার নেতারা রাখতে পারিনি। এটা অতীব সত্য কথা। তার পরও দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এর মধ্য থেকেই আমাদের মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন। এটা অনুধাবন না করা পর্যন্ত কোনো আন্দোলনেই সাফল্য আসবে না।’ জানা গেছে, দুই দফায় মহাসচিব থেকে শুরু করে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, যুগ্ম-মহাসচিব, কোষাধ্যক্ষ ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নাম ঘোষণার পর শেষ দফায় ঘোষণা করা হতে পারে এ পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এতে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক এবং নির্বাহী সদস্যদের নাম ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এ নিয়ে এখন দিনের বেশির ভাগ সময়ই গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ বসে কাজ করছেন বেগম জিয়া। কয়েক দিন ধরে তিনি গুলশান ৮৬ নম্বর সড়কের রাজনৈতিক কার্যালয়েও যাচ্ছেন না। সব কাজের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তবে সব কিছুরই লক্ষ্য হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচন। এখন থেকে বিএনপির সব ধরনের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম প্রণয়ন করা হচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরপরই চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ইস্যুতে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করবেন খালেদা জিয়া। এর মাধ্যমে তিনি সারা দেশে ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতির ঘটনাসহ তার নিজের দলের ব্যর্থতা ও দক্ষতার ঘাটতিগুলোর বিশ্লেষণ করবেন। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে চলতি বছরের মধ্যেই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এদিকে দুই দফায় মহাসচিব থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যন্ত আংশিক কমিটি ঘোষণার পর শেষ দফায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে দিতে পারেন নতুন স্থায়ী কমিটির নামের তালিকা। স্থায়ী কমিটিতে সম্ভাব্য পাঁচজন নতুন মুখের মধ্যে একজনের নাম ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে। তিনি হলেন দলের নতুন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর পর্যায়ক্রমে দলের বিভিন্ন পদে নেতাদের নাম ঘোষণার অংশ হিসেবে ৯ এপ্রিল যুগ্ম-মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মনোনীত দলের নতুন সাতজন যুগ্ম-মহাসচিব ও নয়জন সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। এদিকে সংশ্লিষ্ট অন্য একটি সূত্র জানান, তৃতীয় দফায় পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও কোনো কারণে তা সম্পন্ন করা না গেলে নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম এবং স্থায়ী কমিটির তালিকা ঘোষণার পর চতুর্থ দফায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ওপর।

সর্বশেষ খবর