সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এই নীরবতা কেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এই নীরবতা কেন

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের সংসদে মুক্ত আলোচনা হচ্ছে, শুনানি হচ্ছে অথচ বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা, সংসদ এমনকি সংসদীয় কমিটি নীরব কেন? সরকারের কাছে এমন প্রশ্ন রেখেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

গতকাল রাজধানীতে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা ও দেশের সাম্প্রতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় দেশের অর্থনীতিতে তোলপাড়ের মতো কিছু হবে না। কেন না হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। সে তুলনায় এ পরিমাণ টাকা কোনো বিষয় না সরকারের কাছে। অর্থমন্ত্রী তো এর আগে একাধিকবার বলেছেনও হলমার্কের ৫ হাজার কোটি টাকা কোনো বিষয় নয়। বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে এবং ব্যাংক খাতের পুনর্গঠনে একটি কমিশন গঠনের কথা অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বললেও মাত্র কদিন আগে বলেছেন তার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু সিপিডি মনে করে এটার দরকার আছে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, এই মুহূর্তে আর্থিক খাতের সঠিক স্বাস্থ্য কী আমরা কেউ বলতে পারি না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়ের বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য আমরা জানতে পারি না। এ কমিশন শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয়, বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্বলতাও খতিয়ে দেখবে। পানামা পেপারস সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশ থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। আন্ডার ইনভয়েস, ওভার ইনভয়েস ছাড়াও বিদেশে বিনিয়োগের নামে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না—তা খতিয়ে দেখা দরকার। তবে পাচার প্রতিরোধে অবৈধ সম্পদ ও আয় এগুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে এবং এগুলোকে মূল অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বলে একটা বিষয় আছে, এটি নিয়ন্ত্রণ করার মতো সদিচ্ছা ও মনোবল সরকারের আছে কি না সেটাও ভেবে দেখতে হবে। রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমরা প্রথম বিদেশি গণমাধ্যম থেকে জেনেছি এবং ঘটনাটি বিভিন্ন দেশে আলোচনা হয়েছে। এ ঘটনার পর অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আচরণে আমাদের আর্থিক খাতের সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনাটি এজেন্ডা হিসেবে আমাদের মন্ত্রিসভা ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে কিনা, আমি জানি না। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উচিত বিষয়টি নিয়ে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করা। এক্ষেত্রে আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও চরম বিভ্রান্তি বিরাজ করছে। তিনি বলেন, বাজেটের প্রাক্কলন ও বাস্তবায়নের মধ্যে পার্থক্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সব থেকে বড় পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে অর্থায়নের ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে। আর অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বড় পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে— রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ক্ষেত্রে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই পার্থক্য বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। এতে বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। এ কারণে আগামী বাজেটে গুণগত মানের বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। আর আমাদের দেশের বাজেটের মূল সমস্যা দুটি এর একটা অর্থায়ন, অন্যটি হলো বাস্তবায়ন। দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশের বাজেটের যে আকার এটা জিডিপি’র ১৭ শতাংশ, এটা মোটেও উচ্চাভিলাষী বাজেট নয়। এটা বাড়িয়ে ২২-২৩ শতাংশ করা গেলে ভালো। বাজেট কাঠামো সংস্কারে স্থানীয় সরকার বাজেট পৃথকভাবে দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা খাত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও যথাযথ বরাদ্দ বেশি দেওয়া প্রয়োজন। এ বছর আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ হলেও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নেমে গেছে অনেক নিচে। কর্মস্থানের পরিমাণও কম। এডিপি বাস্তবায়নের হার গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। দেবপ্রিয় বলেন, এটা খুব হতাশাজনক যে, আয়করের আওতায় পড়ে এমন সম্ভাব্য ৫০ শতাংশ লোক এখনো আয়কর দেন না। আয়কর বাড়ানোর চেয়ে নতুন আয়করদাতার সংখ্যা বাড়ানো দরকার।

সর্বশেষ খবর