বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
কলকাতার চিঠি

রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তাকেও এসব ভাষা শুনতে হতো

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তাকেও এসব ভাষা শুনতে হতো

গত রবিবার পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় ধাপ ভোটের পরিস্থিতি দেখতে বোলপুরে গিয়েছিলাম। কারণ দুই মাস ধরে শান্তিনিকেতনের তথা সমগ্র বীরভূম জেলায় সন্ত্রাস আর সন্ত্রাস হয়েছে। তা দেখার জন্যই কলকাতা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সেখানে যাই।

আশ্রমিক আর শিক্ষাবিদদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে কি ভোট দিতে যেতেন? প্রথমে সবাই হকচকিয়ে গেলেন। তারপর বললেন, রবীন্দ্রনাথ ভাগ্যিস বেঁচে নেই। থাকলে  তাকেও এখনকার ভাষা শুনতে হতো। লাভপুরের তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা বললেন, গুরুদেব বেঁচে থাকলে হয়তো তিনি সোনার বাংলা নামটি প্রত্যাহার করে নিতেন। এ গানটি যখন তিনি লেখেন, তখন বাংলা অবিভক্ত। এপার বাংলার সংস্কৃতির পুরোটাই নিংড়ে ছিবড়ে করে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। আমাদের সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশ আমার সোনার বাংলা... গানটি তাদের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভারত বিশ্বের দরবারে বুক কিলিয়ে বলে বেড়ায় আমাদের গণতন্ত্র সবার শ্রেষ্ঠ। কিন্তু আমরা গত পাঁচ বছরে কী দেখছি? গণতন্ত্র নেই। আছে সন্ত্রাস আর লাগামছাড়া দুর্নীতি। পুরোটাই নেতিবাচক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনারকে উঠতে বসতে তুলাধোনা করেছেন। বলেছেন, জাইদি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার), তুই কে? তোকে আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব। যেমন ভাষা, তেমন গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা। ভোটের দিন দেখা গেল বীরভূমের এক নায়ক বলেছিলেন, ভোটারদের জন্য গুড়-বাতাসা দেবেন। তাই রেখেছিলেন। ভোট দিয়ে বেরোনোর সময় তাদের হাতে প্যাকেট ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশনার বীরভূমের ছোট মুখ্যমন্ত্রী অনুব্রত মণ্ডলকে নজরবন্দি করার আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি সে আদেশ অমান্য করে বলেছেন, কমিশন! কোন কমিশন? আমাকে আটকায় কে? আমি যা করি দিদির সঙ্গে কথা বলেই করি। ভোটের চার-পাঁচ দিন আগে বলেছিলেন, ভোটের দিন আমি সব বিরোধী ভোটার আর এজেন্টদের ভ্যানিশ করে দেব। রিপোর্টাররা জিজ্ঞাসা করেন— কী করে করবেন? অনুব্রত বলেছিলেন ওস্তাদের মার শেষ রাতে। ভারতের সব সংবাদমাধ্যমই অনুব্রতর মস্তানি নিয়ে রিপোর্ট করছে। অথচ প্রচারে গিয়ে দিদি বলছেন, কেষ্ট বড় ভালো ছেলে, দক্ষ সংগঠক। বোলপুরের একাধিক শিক্ষাবিদ বলেছেন, কেষ্টর ভ্যানিশ করার ক্ষমতা আছে। তাদের প্রশ্ন— এক যুগ আগে ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথের নোবেল মেডেলও কি তারই কারসাজি? শুরুতেই যে কথা বলেছি, রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে বুঝতেন তার আদরের বাংলা ভাষার কী অমর্যাদা হচ্ছে। তিনি হয়তো বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব বা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের মতোই গর্জে উঠতেন। আর তারাশঙ্করবাবুও বেঁচে থাকলে আরও একটি কালজয়ী উপন্যাস লিখতেন। তাতে খলনায়ক হতেন ৬ ফুট লম্বা ১৮০ কিলো ওজনের অনুব্রত ওরফে কেষ্ট। ঠাণ্ডা নয়, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য গোটা বীরভূমের লোক তেতে উঠেছিলেন। তাদের মতামত এখন ইভিএম মেশিনে বন্দী। অন্যদিকে, দিদি আবার তার ভাইদের ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। নারদা স্টিং কাণ্ডে যাদের ছবি টিভিতে দেখানো হয়েছে সেসব তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী, তথা তার আদরের ভাইদের ত্যাজ্য করে দিয়েছেন। বলেছেন, এরা ঘুষ নিয়েছে বা নেবে জানলে তিনি নাকি তাদের টিকিটই দিতেন না। এর থেকে আজব কথা কেউ কখনো শুনেছে? গোটা দুনিয়া যখন টিভিতে এদের ঘুষ খেতে দেখছে তখন তিনি নাকি জানতেন না। রাজনৈতিক মহল প্রশ্ন তুলেছে, মদন মিত্র তো অনেক দিন ধরে জেলে আছেন। তাহলে তাকে টিকিট দিলেন কেন মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে দিদির পরিস্থিতি খুবই খারাপ। তার নির্বাচনী কেন্দ্রের ভবানীপুরেই ভোটাররা দিদির সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

সর্বশেষ খবর