বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন

অবহেলা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তার সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। তবে আইটি নিরাপত্তা ও রিজার্ভ তত্ত্বাবধানে কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি। এ ক্ষেত্রে যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। তবে রিজার্ভ চুরি করা হ্যাকাররা দেশি না বিদেশি, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত কমিটি। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে তা বোঝা যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যাকাররা শক্তিশালী চক্র। এদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে গঠিত ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটি এসব বিষয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এই প্রতিবেদন (রিপোর্ট) জমা দেয় তদন্ত কমিটি। এ সময় কমিটির অপর সদস্য ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও গকুল চাঁদ দাস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রতিবেদন জমার প্রায় দুই ঘণ্টা পর রাত ৮টা ৫ মিনিটে নিজ দফতর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনটি পড়ে দেখার পর তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন। আর ফরাসউদ্দিন বেরিয়ে যাওয়ার সময় অপেক্ষমাণ সংবাদকর্মীদের বলেন, প্রতিবেদনে কী আছে তা সরকার বলবে। আদৌ এটি প্রকাশ করা হবে কি না তা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে এটি হজম করতে সরকারের আরও সময়ের প্রয়োজন। ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। প্রতিবেদনটি সরকার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুক। এ জন্য সরকারকে দম নেওয়ার সময় দিতে হবে। হজম করার জন্য সময় দিতে হবে। আর সরকারকে একটু সময় দেওয়াটা খুব ফেয়ার হবে। সরকার বলেছে, বিষয়টি তারা আগে পরীক্ষা করবে, তারপর এ বিষয়ে আপনাদের (মিডিয়া) সঙ্গে কথা বলবে।’ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট কি না-এ প্রশ্নে ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট না হলে কোনো কাজে হাত দিই না। প্রতিবেদন তৈরিতে তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবহৃত বিভিন্ন কম্পিউটার, ফ্যাক্স, টেলিফোন, সুইফট কোডসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করছে। এ বিষয়গুলোই অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।’

একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য বা সুপারিশ করা হয়নি। তবে রিজার্ভ কীভাবে চুরি হয়েছে, এখানে কার কোন দায়িত্ব ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিক দায়িত্ব পালন করেছে কি না সেসব বিষয়ে কিছু ধারণা দেওয়া হয়েছে। কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে ও কার বরাবর অবৈধভাবে অর্থ পরিশোধের নির্দেশ গেছে, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব তদন্ত কমিটির।  এর আগে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ১৫ মার্চ ড. ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে সরকার। কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। আর ৭৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চেয়েছে সরকার। তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারির চার দিন পর ২০ মার্চ ফরাসউদ্দিন হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২২ মার্চ তিনি প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে তদন্তকাজ শুরু করেন। এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যবেক্ষণে সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ওই টাস্কফোর্স আজ প্রথম বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর