যে কেউ চাইলেই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ—টিআইবি ও তার ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসহ সংস্থাটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাবসংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারবেন। এ কথা জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি আরও বলেন, ‘সম্পদের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠার বিষয়টি আমাদের জন্য ভালো।’ গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘তৈরি পোশাক খাতের সুশাসন অগ্রবর্তী চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন। এর আগে ১৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে টিআইবির সম্পদের বিবরণ প্রকাশের দাবি জানান। সম্প্রতি পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল চিলি শাখার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জয় এ দাবি জানান। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাত নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রানা প্লাজার পরে পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতে সরকার ও বিভিন্ন মহলের গৃহীত উদ্যোগের মধ্যে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৯ শতাংশের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর ৩৮ শতাংশ বাস্তবায়নে সন্তোষজনক অগ্রগতি অর্জিত হলেও অনেক উদ্যোগ বিভিন্ন কারণে এখনো প্রত্যাশিত পর্যায় অর্জন করেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে সূচকে গৃহীত ১০২টি উদ্যোগের মধ্যে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭৭ শতাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২৩ শতাংশ উদ্যোগের ক্ষেত্রে ধীরগতি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্যোগটি থেমে গেছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত এ গবেষণায় বলা হয়, চলমান ৬৮টি উদ্যোগের মধ্যে ৬টি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ৩৯টি উদ্যোগের বাস্তবায়ন সন্তোষজনক, ১০টি উদ্যোগ বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং ১৩টি উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শ্রমিকদের আহার ও বিশ্রামের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমিতসংখ্যক কারখানায় সেফটি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রতা দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিক অধিকার রক্ষায় শ্রম পরিদফতরে ‘হটলাইন’ স্থাপনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত তিন বছরে পোশাক খাত গর্ব করার মতো স্থানে পৌঁছেছে; যা কিনা বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। তবে কাগজপত্র, আইন ও বিধিমালায় যেসব অগ্রগতি এসেছে সেগুলো প্রয়োগ করা ও অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়নি সেগুলোর ওপর নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে উদাহরণ তৈরি করা না গেলে এ ধরনের অপরাধ ঘটতেই থাকবে। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর ই খোদা। এতে আরও ছিলেন টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান প্রমুখ।
