শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভিডিও ফুটেজ নিয়ে নানামুখী রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিডিও ফুটেজ নিয়ে নানামুখী রহস্য

রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় খুনের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে নানামুখী রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু দূরের ওই ভিডিও ফুটেজে যে পাঁচ যুবকের আনাগোনো লক্ষ্য করা যায়, তারা আদৌ এই দুর্ধর্ষ খুনের ঘটনায় জড়িত কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এ বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। তবে গোয়েন্দারা এই ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত আলামত ও তথ্যের সূত্র ধরে তদন্তে অনেকটা এগিয়েছে বলে দাবি করেছে। তাদের দাবি, খুনিদের দুজন শনাক্ত হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর কলাবাগানের ৩৫ উত্তর ধানমন্ডির আছিয়া নিবাস নামে নিজ ফ্ল্যাটে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা জুলহাজ সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাজ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাতো ভাই। তার সঙ্গে নিহত মাহবুব রাব্বী তনয় লোকনাট্য দলের কর্মী ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখা জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে খবর দিয়েছে জঙ্গি তত্পরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। একিউআইএসের বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলামের মুখপাত্র মুফতি আবদুল্লাহ আশরাফের নামে টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তাদের দুঃসাহসী মুজাহিদীনরা এই দুজনকে হত্যা করেছে’। বিবৃতিতে জুলহাজ মান্নানকে ‘বাংলাদেশে সমকামিতা প্রসারের পথিকৃৎ’ ও ‘সমকামীদের গুপ্ত সংগঠন রূপবানের পরিচালক’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। আর ‘সামির মাহবুব তনয়’ হিসেবে তনয়কে জুলহাজের সহযোগী পরিচয় দেওয়া হয়েছে। দেশ-বিদেশে তোলপাড় করা এই জোড়া খুনের ঘটনার পর গোটা পুলিশ প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। সরকারও এ নিয়ে বিব্রত। হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট, সিআইডি ও থানা পুলিশ সমন্বিত হয়ে কাজ শুরু করে। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় দুটি মামলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলা তদন্ত করছে। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঘটনাস্থল কলাবাগানের ৩৫ উত্তর ধানমন্ডি থেকে শুরু করে খুনিদের পালিয়ে যাওয়া সড়কের আশপাশের যেসব সিসিটিভি ছিল, তার সবগুলোই পর্যালোচনা শুরু করে। একটি ভিডিও ফুটেজে পাঁচ যুবকের আনাগোনা লক্ষ্য করার বিষয়টি গোয়েন্দাদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। গোয়েন্দারা ওই ভিডিও ফুটেজটি নিয়েই কাজ শুরু করে। ফুটেজটি বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়া থেকে এখন সেটা ইউটিউবেও দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলেছে, ঘটনাস্থল হলো কলাবাগানের ৩৫ উত্তর ধানমন্ডি। খুনের ঘটনা ঘটিয়েই খুনিরা অস্ত্র হাতে পালিয়ে যায় কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠের সামনে দিয়ে ডলফিন গলি হয়ে। তাদের বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। ডলফিন গলির সামনে ৬০ নম্বর বাড়ির কাছে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লাপাত্তা হয় খুনিরা। এ সময় সেখান থেকে ফেলে যাওয়া ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। সূত্র জানায়, ঘটনার পর তিনটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়। পুলিশ ও গোয়েন্দারা সেই তিনটির মধ্যে একটি ভিডিও ফুটেজকে গুরুত্ব দিচ্ছে। যেখানে পাঁচ যুবকের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। সূত্র জানায়, ভিডিও ফুটেজটি ডলফিন গলির। ঘটনাস্থল থেকে সেটির অবস্থান বহু দূরে। সেখানকার ফুটেজটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সাদা শার্ট পরা এক যুবক প্রথমে হেঁটে যাচ্ছে। সামনে দাঁড়ানো অপর যুবকের সামনে যেয়ে কথা বলছেন। অল্প সময় পর তারা দুজনই আবারও হেঁটে ভিতরের দিকে আসছিল।

সর্বশেষ খবর