শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ধরাছোঁয়ার বাইরে খুনিরা নানামুখী ধাঁধায় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধরাছোঁয়ার বাইরে খুনিরা নানামুখী ধাঁধায় পুলিশ

মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা, সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়ের খুনিরা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভিডিও ফুটেজের ওপর ভিত্তি করে খুনি শনাক্তের যে দাবি করা হয়েছিল, তা নিয়ে গোলক ধাঁধায় পড়েছে গোয়েন্দারা। তদন্তে ওই যুবকদের বিষয়ে জোড়া খুন সংশ্লিষ্ট কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে পাঁচ যুবকের একজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খুনিরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) স্লিপার সেলের সদস্য। এর আগেও এবিটির স্লিপার সেলের এই সদস্যরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেছেন, জুলহাজ ও তনয় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সঠিক পথেই চলছে। আমরা সন্দেহভাজন কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। আরও কিছুটা সময় লাগবে। দ্রুতই এ ব্যাপারে জানতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, ব্লগারসহ যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার বেশ কয়েকটির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করেছি      আমরা। কয়েকজনকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। বাকিদের অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলেছে, ঘটনাস্থল কলাবাগানের ৩৫ উত্তর ধানমণ্ডি। খুন করেই খুনিরা অস্ত্র হাতে পালিয়ে যায় কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠের সামনে দিয়ে ডলফিন গলি হয়ে। তাদের বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। ডলফিন গলির সামনে ৬০ নাম্বার বাড়ির কাছে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লাপাত্তা হয় খুনিরা। পালানোর সময় ওদের ফেলে যাওয়া ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। সূত্র জানায়, ঘটনার পর তিনটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়। পুলিশ ও গোয়েন্দারা সেই তিনটির মধ্যে একটি ভিডিও ফুটেজকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যেখানে পাঁচ যুবকের আনাগোনা দেখা গেছে। সূত্র জানায়, ভিডিও ফুটেজটি ডলফিন গলির। এই গলি ঘটনাস্থল থেকে বহু দূরে। সেখানকার ফুটেজটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সাদা শার্ট পরা এক যুবক প্রথমে হেঁটে যাচ্ছে সামনের দিকে। সামনে দাঁড়ানো লাল টি-শার্ট পরা অপর যুবকের সামনে গিয়ে কথা বলছে। অল্প সময় পর তারা দুজনই আবারও হেঁটে ভেতরের দিকে আসছে। ঠিক তখনই ফুটেজে দেখা যায় গলির সামনের সড়ক দিয়ে বেশ কয়েকজন দৌড়াচ্ছে। তাদের পিছু ধাওয়া করছে আরও বেশকিছু মানুষ। একজন পুলিশকেও সেখানে দৌড়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় পাশের একটি ভবন থেকে তিন ব্যক্তি বেরিয়ে আসেন ওই গলিতে। তারা ওই ভবন থেকে বেরিয়ে সামনের সড়কের দিকে যাচ্ছিলেন। গোয়েন্দারা এই যুবকদের সন্দেহ করলেও তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি। পুরো বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দারা পড়েছে গোলক ধাঁধায়। লাল টি-শার্ট পরা ওই যুবককে গত বৃহস্পতিবার রাতে তার ডলফিন গলির বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও গতকাল সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জোড়া খুনের ঘটনায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা আলামতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এরই মধ্যে হামলায় জড়িত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সন্দেহভাজন ছয় সদস্যের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে তিনজন ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জোড়া খুনে সংশ্লিষ্টরা আগের ব্লগার ও লেখক হত্যায় জড়িত ছিল। ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেছেন, ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখে কয়েকজন দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত করা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া আলামত তদন্তে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। হত্যার মোটিভ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেছে। খুব দ্রুতই খুনিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের শুরুতে উগ্রবাদিসহ ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয়েছে। তবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, এটা উগ্রাবাদীদেরই কাজ। কারণ ব্যক্তিগত কারণে কাউকে খুন করার জন্য এতবড় ঝুঁকি নিয়ে কেউ কাউকে খুন করবে না। সমকামীদের অধিকারবিষয়ক পত্রিকা ‘রূপবান’-এর সম্পাদক হিসেবে জুলহাজের ভূমিকাকে উগ্রবাদীরা ভালোভাবে নেয়নি। এ কারণেই আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের একটি স্নিপার সেল তাকে হত্যা করেছে। জুলহাজের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন জানিয়েছেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মা সখিনা খাতুন বর্তমানে তার গুলশানের বাসাতেই রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। মা এখনো জানেন জুলহাজ বিদেশে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবে। মায়ের স্মৃতিশক্তি একটু কম। তারপরও মাঝে মাঝে জুলহাজের বিষয় জানতে চায়। আমরা বিদেশে চিকিৎসার কথাই বলি। তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে তদন্ত দলের কেউ কথা বলেনি। আমাদের কাছে কোনো বিষয় জানতেও চাওয়া হয়নি। তবে বিশ্বাস, পুলিশ সঠিক তদন্ত করে আসামিদের গ্রেফতার করবে। গত সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় রাজধানীর কলাবাগানের ৩৫, উত্তর ধানমন্ডির আছিয়া নিবাসের দ্বিতীয় তলায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ইউএস এইডের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান (৪২) ও তার বন্ধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহবুব রাব্বী তনয়কে (২৫)।

সর্বশেষ খবর