শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

কথা বলতে রাজি নয় হংকং

আলী রিয়াজ

কথা বলতে রাজি নয় হংকং

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নয় হংকং কর্তৃপক্ষ। ফিলিপাইন থেকে দেশটিতে যাওয়া প্রায় ৪৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার নিয়ে তারা কিছু করতেও রাজি নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে হংকংয়ের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সে দেশের কর্মকর্তারা কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ রেমিট্যান্স লেনদেন কোম্পানি ও হংকংয়ে অর্থ পাচারকারী প্রতিষ্ঠান ফিলরিমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। গতকাল আদালতে ফিলিপাইনে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) এ মামলা করে। সন্দেহ করা হচ্ছে ফিলরিমের কাছে এখনো ১৭ মিলিয়ন ডলার রয়ে গেছে, যা প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে অস্বীকার করে আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া রিজার্ভের প্রায় ৪৬ মিলিয়ন ডলার হংকংয়ে পাচার করে দেওয়া হয় ফিলিপাইন থেকে। রেমিট্যান্স লেনদেন কোম্পানি

ফিলরিমের মাধ্যমে ওই অর্থ পাচার করা হয়। হংকং ও চীনের তিন নাগরিকের নামে ফিলিপাইন থেকে এ অর্থ পাচার করে ফিলরিম। ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে, হংকংয়ে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যদিও বিষয়টি নিয়ে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এগমন্ড গ্রুপের (আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার প্রতিরোধ সংগঠন) সদস্য হিসেবে হংকংয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। এ ছাড়া পাচার হওয়া অর্থের বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে। গত সপ্তাহে হংকংয়ে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সম্মেলনে হংকংয়ের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুবিধা জানতে চেয়ে প্রশ্ন রাখেন। একই সঙ্গে ব্যাংকিং সুবিধা নিরাপত্তার বিষয় আলোচনা করেন। সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জ্বালানি, অবকাঠামো সুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়ে ব্যাংকিং বিষয়ে নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন। সম্মেলন শেষে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রিজার্ভ চুরির বিষয়টি নিয়ে অনির্ধারিত কথা হয়। দেশটির কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে কোনো ভূমিকা বা কোনো ধরনের আলোচনা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তারা জানান, বিষয়টি পুরোপুরি ফিলিপাইনের। ফলে এটি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা হতে পারে না। ওই সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, হংকংয়ের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহী। তারা এখানকার পরিবেশ, জ্বালানি ও অবকাঠামো সুবিধা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে রিজার্ভ চুরির সম্পর্কে তারা কিছু উল্লেখ করেনি বা জানতে চাননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সম্মেলনে ব্যাংকিং অটোমেশনসহ বিভিন্ন অগ্রগতির বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। রিজার্ভ চুরি সম্পর্কে তাদের কোনো কর্মকর্তারা কথা বলেননি। এদিকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩৪ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে রয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অর্থের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন ডলার ফিলরিমের কাছে রয়ে গেছে বলে রিজার্ভ চুরির অন্যতম হোতা ক্যাসিনো মালিক কিম অং জানিয়েছেন। তবে ফিলরিম ওই অর্থ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। নিউইয়র্ক থেকে ফিলিপাইনের অর্থ আসার পর প্রায় ৬৪ মিলিয়ন ডলার হংকংয়ে পাচার করা হয় রেমিট্যান্স লেনদেন কোম্পানি ফিলরিমের মাধ্যমে। তবে পুরো অর্থ পাচার করতে পারেনি ফিলরিম। ১৭ মিলিয়ন ডলার ফিলরিমের কাছে রয়ে গেছে। এমন অভিযোগে গতকাল আরেকটি মামলা করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর