শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
রাজনীতি এখন

সম্মেলন ঘিরে দৌড়ঝাঁপ শুরু আওয়ামী লীগে

রফিকুল ইসলাম রনি

সম্মেলন ঘিরে দৌড়ঝাঁপ শুরু আওয়ামী লীগে

আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের বাকি এখনো দুই মাস ১০ দিন। এর মধ্যে পদ-প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা। নিজেদের দৃশ্যমান করতে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি সভাপতির ধানমন্ডির অফিসে যাতায়াত করছেন নিয়মিত। সম্মেলন সফল করতে গঠিত উপ-কমিটিগুলোর নিয়মিত বৈঠকে যারা সদস্য নন, এমন নেতারাও অংশ নিচ্ছেন। লক্ষ্য একটাই, যেভাবেই হোক দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে নিজেদের নাম লেখানো। আবার কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ পদোন্নতির আশায় দিন গুনছে। তারাও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন। অপর একটি অংশ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ার আতঙ্কে রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত ডিসেম্বর মাসেই। গত ৯ জানুয়ারি মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফা বৈঠকে ১০ ও ১১ জুলাই দলের নতুন কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আর সেই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাদের মধ্যে একদিকে যেমন পদ-পদবি হারানোর ভীতি কাজ করছে, অন্যদিকে চলছে পদোন্নতির জোর তদবিরও। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে থাকা নেতারা স্ব স্ব পদ টিকিয়ে রাখতে কিংবা পদোন্নতি পেতে দলটির প্রতিটি অনুষ্ঠানে তাদের এখন সরব উপস্থিতি। আবার কাউন্সিল সামনে রেখে কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বা করলেও নামেমাত্র তারাও এখন নানা লবিং-তদবির শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে। গত কয়েক দিন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির অফিস ঘুরে দেখা গেছে, সাবেক ছাত্রনেতা ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদে ছিলেন এমন নেতাদের আনাগোনা রেড়ে গেছে। শুধু ধানমন্ডির অফিসই নয়, দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতেও পদ-প্রত্যাশীদের যাতায়াত বেড়ে গেছে। নিজ নিজ কর্মী বাহিনীসহ গিয়ে নেতাদের নানাভাবে ‘নিজেকে জনপ্রিয় প্রমাণের’ দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া প্রভাবশালী নেতারা যেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি রাখছেন, সেখানে নিজস্ব কর্মী বাহিনী দিয়ে ‘প্রটোকল’ বাড়িয়ে দিচ্ছেন পদ-প্রত্যাশীদের কেউ কেউ। এদিকে দলের ২০তম কাউন্সিলের জোর প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৩০ মে’র মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা আহ্বান করা হয়েছে। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার অতিথি যেন আসতে পারেন সে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও সম্মেলনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে বলে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে গঠিত ১১টি উপ-কমিটির প্রায় সিংহভাগই ইতিমধ্যে কমপক্ষে একটি করে বৈঠক করেছেন। প্রথম বৈঠক করে মঞ্চ-সাজসজ্জা উপকমিটি। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রায় সব কমিটিই বৈঠক করে প্রস্তুতির প্রাথমিক সব ধাপ চূড়ান্ত করেছে। মঞ্চ-সাজসজ্জা উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্মেলনের সাত দিন আগে থেকে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আলোকসজ্জা করা হবে। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং দলীয় কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী আলোকসজ্জা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো হবে। তিনি বলেন, ব্যানার ও ফেস্টুনের জন্য ইতিমধ্যে একটি নমুনা তৈরি করেছি। তবে চূড়ান্ত হয়নি। অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, দলের জাতীয় সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সম্মেলনে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেস, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি, যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি এবং চীনের চায়না কমিউনিস্ট পার্টিসহ অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আর সম্মেলনে বিদেশি অতিথিদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হবে। বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে। সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, সম্মেলনকে সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এ উপ-পরিষদে মোট দুই হাজার সদস্য নিয়ে গঠন করা হবে স্বেচ্ছাসেবক টিম। এরা শুধু সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, ঢাকা সিটিকে শৃঙ্খলার আওতায় আনার জন্য কাজ করবে। এই দুই হাজার সদস্যকে ৮০টি গ্রুপে বিভক্ত করে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর