শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

গণতন্ত্র না থাকায় খুনোখুনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণতন্ত্র না থাকায় খুনোখুনি

মজিবর রহমান সরোয়ার

দেশে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা না থাকায় খুনোখুনি বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে দেখলাম যে, গণতন্ত্র ও রাজনীতি স্থবির থাকলে অর্থনীতির মুক্তি হবে না। আবার তারাই গণতন্ত্রকে মুক্তি দেন না। রাজনীতিকে স্থবির করে রাখেন। বিষয়টা হচ্ছে এই, দেশে গণতন্ত্র না থাকলে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। খুনোখুনি বাড়ে। দুঃখজনক হলো, আমরা সবাই অতীত ইতিহাসের কথা বলি। কিন্তু কেউই অতীত থেকে শিক্ষা নিই না।’

গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া বরিশালের এই নেতা। এর আগে তিনি দলের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব  পাওয়ার পর সম্প্রতি বরিশাল বিভাগের নেতা-কর্মীরা মজিবর রহমান সরোয়ার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হক নান্নুকে সংবর্ধনা দেন। এ প্রসঙ্গে সরোয়ার বলেন, ‘পুলিশ বুঝে উঠতে পারেনি যে এত লোকের সমাগম হবে। তাই সংবর্ধনার জন্য বড় জায়গা দেয়নি। ছোট জায়গায় অনুষ্ঠানটি হয়। তার পরও অন্তত ৫০ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে। বরিশাল শহর লোকারণ্য হয়ে যায়। সরকার জনগণকে অধিকারবঞ্চিত করেছে। জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। এরই প্রতিবাদে এত লোকের সমাগম হয়েছে।’ মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘আজকে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। রাজনৈতিক এ অস্থিরতার সুযোগ নিয়েই একটি পক্ষ খুনোখুনি করছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো নেই বলেই এ অবস্থা। আজ নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোও অচল হয়ে পড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো এখন খুবই জরুরি। স্বাধীনতার রক্ষাকবচই হলো গণতন্ত্র। স্বাধীনতার এত বছর পরও গণতন্ত্রকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমরা সবাই বুঝি, সুখ-শান্তি, উন্নয়ন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং দেশের স্থিতিশীলতা— সব কিছুর মূলেই হলো ডেমোক্রেসি। আজ ভোটের অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সমাজে হানাহানি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার নিজেরাই সন্ত্রাসে জড়িত। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করছে, তারপর তারাই আবার সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের কথা বলছে। পরোক্ষভাবে দেশে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সরকারই দায়ী। এখন দু-একটি ঘটনা ঘটলেই সরকার বিরোধী দলকে দোষারোপ করছে। আমি মনে করি, সরকারের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়ার কারণেই বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।’ উদ্বেগ প্রকাশ করে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও ইউপি নির্বাচনে ৫০ জন মারা গেল। সব খুনই খুন, তারাও দেশের মানুষ। সব খুনেরই বিচার হওয়া দরকার। আজ সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে এতগুলো মানুষকে হত্যা করা হলো, কাউকেই গ্রেফতারের খবর নেই। সরকার নিজেই অবিচার করে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারবে না। এ মুহূর্তে করণীয় কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারকে দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে শিগগিরই একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা দরকার। এতে দেশের অধিকারবঞ্চিতও ক্ষুব্ধ মানুষ শান্তি পাবে। গ্রামে-গঞ্জে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজ যদি দেশে জনগণের ভোটাধিকার থাকত তাহলে এমন অরাজকতার সৃষ্টি হতো না। বিরোধী দলকে আজ ঠিকমতো মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করতে দেওয়া হয় না। চারদিকে অস্থিরতা। এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিএনপি এখন কোন পথে— এমন প্রশ্নে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করছি। দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে কথা বলছি। এটাই আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আমি মনে করি, দলের ষষ্ট জাতীয় কাউন্সিলের পর বিএনপি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এরপর নিশ্চয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন কর্মসূচি আসবে।’ দলের অভ্যন্তরীণ সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা বড় রাজনৈতিক দলে ছোটখাটো সমস্যা থাকতেই পারে। তবে বিএনপিকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দল ভাঙার জন্য আগে থেকেই ষড়যন্ত্র ছিল, এখনো আছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দল অনেক শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমাদের কাজ করে যেতে হবে। চেয়ারপারসনের প্রতি নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আগামী দিনে চেয়ারপারসন যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন তারও ইতিবাচক ফল আসবে বলে আমি মনে করি।’ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘ইউনিয়ন-উপজেলা থেকে কাউন্সিল করে দল পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনমুখী নয়, আন্দোলনমুখী কমিটি গঠন করতে হবে। কাউন্সিল করে কমিটি করতে হবে। স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে। আগামী দিনে দলকে ঢেলে সাজিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের ফিরে আসতে হবে।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আংশিক ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটি কেমন হলো— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঘোষিত কমিটিতে সবাই যে ত্যাগী, তা হয়তো বলা যাবে না। তবে সবাই যোগ্য। বিএনপির সামনে তো কঠিন বাস্তবতা। সামনের কমিটি আরও ভালো হবে বলে আমি মনে করি।’

সর্বশেষ খবর