বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভ্যাট নিয়ে জটিলতা বাড়ছেই ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ আর অসন্তোষ। তারা খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান চান। ভ্যাট আইন-২০১২ বাস্তবায়নের আগে ৭ দফা সংশোধনী সুপারিশ দিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদেরকে এসব লিখিত সুপারিশ দিয়েছে এফবিসিসিআইসহ অন্য ব্যবসায়ী সংগঠন। নতুন বাজেট ঘোষণার আগে এ সমস্যার সমাধান চেয়ে সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, খুব দ্রুত ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বসে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করা হবে। জার্মানি সফররত অর্থমন্ত্রীর শুক্রবার দেশে ফেরার কথা। এরপর ৮ মে রবিবার এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসতে পাড়েন বলে জানা গেছে। এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে নতুন ভ্যাট আইনের সংশোধনী চেয়ে সাত দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো— ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে তা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা। সব সরবরাহের (উৎপাদন, ব্যবসা ও সেবা প্রদান) ক্ষেত্রে ৩৬ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত কর অব্যাহতি। এর ধারাবাহিকতায় বার্ষিক টার্নওভার ৩৬ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত কেবল মাত্র উৎপাদন পর্যায়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত টার্নওভার কর আরোপের দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। টার্নওভার কর প্রদানকারী ক্রয় করা উপকরণের বিপরীতে মূসক নিবন্ধিত ব্যক্তি কর রেয়াত গ্রহণ করতে পারবেন। ব্যবসায়ী পর্যায়ে বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে, টার্নওভারের পরিমাণ নির্বিশেষে ২ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা। উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণে অসমর্থ প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকার হ্রাসকৃত হারে মূসক আরোপ করা। নতুন আইনের ধারা ২(৯৭)-এর দফা (ক) সব আত্মীয়স্বজনকে করদাতার খেলাপি কর আদায়ের জন্য দায়ী না করা।

এদিকে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) মনে করে আগামী জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই আইন বাস্তবায়ন হলে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে। তবে এ আইনের কিছু বিষয়ে ব্যবসায়ীদের যে আপত্তি রয়েছে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার সুপারিশ করেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ গত ২৭ এপ্রিল সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সংশোধন না আনা হলে ভ্যাট উত্তোলন নিয়ে আরও জটিলতার সৃষ্টি হবে। এতে আগামী বাজেটে উল্টো ফল আসতে পারে। আর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় এটা অত্যন্ত অসম্ভব। এ ছাড়া এ আইন সংশোধন না করে বাস্তবায়ন করলে ব্যবসায়ীদের আরও বেশি হয়রানির মুখোমুখি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই ভ্যাট দিতে চাই। কিন্তু হয়রানিমুক্তভাবে ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকেই। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হোসাইন খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে অনেকগুলো অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। এর অন্যতম হলো ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এটা অনেক উচ্চ হার। এটা কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে হবে। ভ্যাট আদায়, নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় একটা শৃঙ্খলা আনতে হবে। বর্তমানে এ খাতে একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ রয়েছে যা ব্যবসায়ীদের কাছে এক আতঙ্ক হিসেবে কাজ করে। কেননা ভ্যাট আদায়ের নামে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব বিষয়ে সমাধানের জন্য অর্থমন্ত্রী আগামী ৮ মে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসার সময় দিয়েছেন। আশা করা যায় ওই বৈঠকে এ বিষয়ে সমাধান বেরিয়ে আসবে। আর এই অমীমাংসিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সমাধানে পৌঁছতে হবে নতুন বাজেট পেশের আগেই। এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, সব মানুষই মূসক দিতে চায় কিন্তু আমাদের দেশের মূসক আইন অত্যন্ত জটিল। এটাকে সহজ করতে হবে। মাত্র ১২ লাখ মানুষ কর দেয় এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ৩৫ শতাংশ কর্পোরেট কর অনেক বেশি। আগামী বাজেটে এটাকে কমিয়ে করের আওতা বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ভ্যাট আইনে যেসব সংশোধনীর দাবি জানানো হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত একটা সমাধানে পৌঁছতে হবে। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছতে হবে। ব্যবসায়ীদের সবাই ভ্যাট দিতে চায়। কিন্তু তাদের ওপর জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আর ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া সহজ হতে হবে। ভ্যাট আদায়ের নামে সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট আখতার মতিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের অনেক উদ্বেগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এ আইনের যে নীতিমালা সেটা আমরা এখনো হাতে পাইনি। এ জন্য পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না এ আইনে আরও কী কী জটিলতা রয়েছে। এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়ার জন্য খুব দ্রুত নীতিমালাটা জারি হওয়া প্রয়োজন। আর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের নামে যেসব হয়রানি করা হয় সেগুলোও বন্ধ করতে হবে। নইলে নতুন অর্থবছর শুরু হলে এ আইন নিয়ে আরও জটিলতা বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর