শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
আপিলে টিকবে না : আইনমন্ত্রী

হাইকোর্টের রায় সংবিধান পরিপন্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে আনতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় হচ্ছে ‘সংবিধান পরিপন্থী’। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় স্থগিত চাইবে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল হাইকোর্টের এ-সংক্রান্ত রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর বিকালে সংসদ অধিবেশনে এক অনির্ধারিত আলোচনায় এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

আনিসুল হক বলেন, ‘সংসদের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে দেওয়া এ রায় আপিল বিভাগে টিকবে না। রাষ্ট্রপক্ষ এখন আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা আইনি পথেই যাব। আমরা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করব না।’ উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। ওই সংশোধন চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবীর একটি রিট আবেদনের রায়ে গতকাল হাইকোর্টের তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ সংসদের ওই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে রায় দেন। আদালতের এ আদেশ নিয়ে সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইসলাম। পরে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল। তারা আদালতের রায়ের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। এ সময় অবশ্য সংসদে ছিলেন না সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ সদস্যদের দাবির মুখে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সংশোধনীটা পাস করেছিলাম বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে, বিচারপতি-বিজ্ঞ বিচারকদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য। আর্টিক্যাল ৯৬-এ সংশোধনীর আগে যা ছিল, তা হলো মার্শাল ল ফরমান দ্বারা তৈরি। ১৯৭৮-এর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। আমরা তা পরিবর্তন করতে গিয়েছিলাম। উনারা (হাইকোর্ট) সেটা আজকের (গতকালের) রায়ে বলে দিলেন, এটা “ইললিগ্যাল”। এখনো আমি বলি এটা মোটেও ইললিগ্যাল নয়। উনারা যেটা বলছেন সেটা নট মেইনটেনেবল।’ ১৯৭২ সালে মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত ছিল। ’৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয় একটি সামরিক ফরমানের মাধ্যমে। আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। এখনো বিশ্বাস করি বিচার বিভাগ স্বাধীন। আপিল করলে এ রায় গ্রহণযোগ্য হবে না। সেজন্য আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে আপিল করব।’ এরপর দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী বিচারকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোসংক্রান্ত বিল উত্থাপন করতে গেলে সংসদ সদস্যদের বিরোধিতার মুখে পড়েন আইনমন্ত্রী। তখন তিনি সংসদ সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘হাইকোর্টের এ রায় সংবিধান পরিপন্থী। আপিল করলে এ রায় গ্রহণযোগ্য হবে না।’ এ সংশোধনের বিরোধিতাকারীদের পক্ষে আদালতে শুনানিতে বলা হয়েছিল, এ পরিবর্তন হয়েছে সংবিধানের ‘মৌল কাঠামোকে পরিবর্তন’ করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মূল কাঠামো। যেহেতু ‘মূল কাঠামো পরিবর্তন’ করা হয়েছে, সেহেতু ষোড়শ সংশোধনী সংবিধান পরিপন্থী।

সর্বশেষ খবর