রবিবার, ৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঝুঁকির শঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝুঁকির শঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা

সাইবার হামলার আশঙ্কা জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি তারা আমলে না নেওয়ার কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছু বিদেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রক্রিয়ায় ঘাটতি থাকার পরও ব্যবস্থা নেয়নি ফেড কর্তৃপক্ষ। রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা সাইবার হামলার বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, কয়েক বছর আগেই ব্যাংকিং খাতে সুইফট সিস্টেমের মাধ্যমে সাইবার হামলার আশঙ্কা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সেই আশঙ্কা আমলে নেওয়া হয়নি। বরং সাইবার খাতকে নিরাপদ না করে নজর দেওয়া হয়েছে অন্য নিরাপত্তা খাতে। এখন পর্যন্ত কোনো হামলা হয়নি ভেবেই স্বস্তিতে ছিলেন তারা। ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হয় হামলার আশঙ্কাকে গুরুত্ব দিতে ও আমলে নিতে ব্যর্থ হয়েছে, না হয় ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। সাইবার হামলা বা হ্যাকিংয়ের বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়ায় রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে। কর্মকর্তারা বলেছেন, বিভিন্ন কারণে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ব্যবস্থাপকরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তার মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রক্রিয়ায় ঘাটতি ছিল। ফেডারেল ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা ভঙ্গ করে হ্যাকাররা স্থানীয় ব্যাংকের কম্পিউটার হ্যাক করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে হানা দিতে সক্ষম ছিল। ওই কর্মকর্তারা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) কর্মকর্তারা সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে সাইবার হামলার আশঙ্কা করেছিলেন। এ আশঙ্কা নিয়ে ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করে। তবে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, হামলার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঝুঁকির মাত্রা যথাযথভাবে নিরূপণ করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিউইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংক বেশ কিছু ঝুঁকির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল। এর অন্যতম ছিল সুইফট সিস্টেম। সুইফট সিস্টেমের নিরাপত্তা না বাড়িয়ে মুদ্রা পাচার বা মানি লন্ডারিং রোধ এবং বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতেই ফেডারেল রিজার্ভের সব নিরাপত্তা সক্ষমতাকে কাজে লাগানো হয়। আর ব্যাংকটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তখন এই ভেবে স্বস্তিতে ছিলেন যে, এ সুইফট সিস্টেমের নিরাপত্তা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কোনো সাইবার হামলার ঘটনা যেহেতু ঘটেনি তাই তারা বিষয়টিতে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীতা মনে করেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইফটের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের ভুয়া নির্দেশ পাঠিয়ে যে অর্থ জালিয়াতি সম্ভব তাকে ‘ফ্যাট টেইল রিস্ক’ মনে করেছিলেন ওই কর্মকর্তারা। ঝুঁকিটি ফেড নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আগে আমলে নিলে হ্যাকাররা তা আর বাস্তবায়ন করার সুযোগ পেত না। প্রতিবেদনে যেসব কর্মকর্তা কথা বলেছেন তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পরও নিজেদের দুর্বলতার কথা অস্বীকার করে আসছে ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনার প্রায় তিন মাস পর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছে তারা। আগামী মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ডুডলির সঙ্গে বৈঠক করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর।

সর্বশেষ খবর