প্রতিটি ধাপে সহিংসতা, ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা, কেন্দ্র দখল, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসল নির্বাচন কমিশন। চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী দুই ধাপের নির্বাচনে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে এবং নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জরুরি চিঠি দিয়েছে কমিশন। ওই চিঠিতে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, যেকোনো সহিংসতা কঠোর হাতে দমন ও সহিংসতাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি টহল বৃদ্ধি ও দৃশ্যমান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনের চার ধাপে ৮০ জনের বেশি প্রাণহানি ঘটে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সহিংসতা ও হামলার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিল নির্বাচন কমিশন। ইসির উপ-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত ওই চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ভোটারদের নিরাপত্তা বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, যেকোনো সহিংসতা কঠোর হাতে দমন, সহিংসতাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি টহল বৃদ্ধি ও দৃশ্যমান করতঃ প্রার্থী, ভোটার তথা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনকরতঃ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায় ভোটারদের নিরাপত্তা বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনী সহিংসতা রোধ, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকির মাধ্যমে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।’ নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে ওই চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ৬ ধাপে ইউপি নির্বাচনের ইতিমধ্যে চার ধাপে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বাকি দুই ধাপের ভোট আগামী ২৮ মে ও ৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দিন দিন নির্বাচনী সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন নিহত হয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছেন। অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও দাখিলে বাধা প্রদান, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও চাপ প্রয়োগ করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ মাঠপর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে।
