শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

এফবিআই তদন্তে কিনারা হয়নি অভিজিৎ হত্যার

এবার জুলহাজ-তনয় তদন্তেও তাদের আগ্রহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এফবিআইর সহায়তার বিষয়টি কেবল আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ! চাঞ্চল্যকর অভিজিৎ হত্যার বিভিন্ন আলামত এফবিআইর কাছে হস্তান্তর করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন হাতে পাননি তদন্তসংশ্লিষ্টরা। এতে অভিজিৎ হত্যা মামলার তদন্ত এক প্রকার বন্ধ হয়ে আছে। যাদের কারণে অভিজিৎ হত্যার তদন্ত থমকে আছে, সেই এফবিআই এবার ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যার তদন্তে সহায়তার আগ্রহ দেখাচ্ছে। ঢাকার তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এফবিআইর এমন আগ্রহে তারা বিস্মিত।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, জুলহাজ-তনয়কে নৃশংস হত্যার কয়েক মুহূর্ত পর রক্তাক্ত দুই লাশের ভিডিও রক করা এবং সেই ক্লিপটি ইউটিউবে কারা ছড়িয়ে দিল তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে। আর এজন্য ইতিমধ্যেই এফবিআইর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। গত ১৯ দিনেও তারা এখনো কোনো তথ্য জানাতে পারেনি।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডার একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে কামাল ওরফে শাহীন ওরফে জামাল ও শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে হিরণ নামে দুই যুবককে গ্রেফতারের পর অভিজিৎ হত্যা রহস্যটি  খোলাসা হতে শুরু করে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী যশোর থেকে হাদী নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। হাদীসহ অন্য একজন অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল বলে ওই সূত্রের দাবি। গ্রেফতারকৃতদের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে এর নমুনা হস্তান্তর করা হয়েছিল এফবিআইর (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) কাছে। তবে এ পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার প্রতিবেদনই হাতে পাননি তদন্তসংশ্লিষ্টরা। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০১৫ সালে গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার ও রংপুরে জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও খুন হওয়ার পর আইএস দায় স্বীকার করে বলে প্রচার করে ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’। টুইটারে বার্তা দিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্ক তৈরি করেন সাইটের রিটা কাৎস নামের এক নারী। দেশীয় গোয়েন্দারা বার বার চেষ্টা করেও এখনো তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। একই বছর লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার পর একিউআইএসের নামে দায় স্বীকার করা হয়। সর্বশেষ জুলহাজ-তনয়সহ গত এক বছরে অন্তত ১৩টি হত্যাকাণ্ডে আইএসের নামে আর ৬টি ঘটনায় একিউআইএসের নামে দায় স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু দায় স্বীকারকারীরা আসলেই কারা, তা নিয়ে দ্বিধায় গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, এসব হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের অংশগ্রহণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত এফবিআইকে দেওয়া হলেও কোনো পরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহায়তার ব্যাপারে পুনরায় এফবিআই আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগও করেছে। তাদের হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারকারীদের খুঁজে বের করার জন্য বলা হয়েছে।’ গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ফুটপাথে খুন হন অভিজিৎ রায়। দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপে আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদও। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। অন্যদিকে, ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানের ৩৫ উত্তর ধানমন্ডির আছিয়া নিবাসের দ্বিতীয় তলায় নৃশংসভাবে খুন হন ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাজ ও তার বন্ধু তনয়। জুলহাজ সমকামীদের অধিকারবিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’-এর সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তনয় মঞ্চনাটক করতেন। বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের পরও গত ১৯ দিনে এ হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা। হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ এক ঘাতককে জাপটে ধরে। তার অন্য সহযোগীরা পুলিশকে কুপিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। তবে এ সময় পুলিশ ঘাতকদের একটি ব্যাগ রেখে দিতে সক্ষম হয়।

 ব্যাগ থেকে আমেরিকার তৈরি একটি গোলাকৃতির পিস্তল, ম্যাগাজিন, চাপাতি, লাল চেক গামছা, পুরনো লুঙ্গি, কাপড়ের টুপি, বাংলা ও আরবি লেখা সাদা কাগজের টুকরো ও অফিশিয়াল ব্যাগ পাওয়া গেছে। তবে ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যাওয়া ডিএমপি কমিশনার ব্যাগ থেকে মোবাইল উদ্ধারের কথা বলেছিলেন। যদিও দায়ের করা মামলার জব্দ তালিকায় মোবাইলের কথা উল্লেখ নেই। নিহত মাহবুব রাব্বী তনয়ের বোন জাকিয়া বলেন, ‘আমরা সত্যিই আতঙ্কিত। ১৯ দিন পেরিয়ে গেল। কোনো অগ্রগতিই হলো না!’

সর্বশেষ খবর