শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
কর্মচারী রিয়াদ হত্যা

ঘরোয়া মালিক সোহেল সাত মাসেও অধরা!

আলী আজম

ঘরোয়া মালিক সোহেল সাত মাসেও অধরা!

সোহেল

রাজধানীর মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কর্মচারী রিয়াদ  হোসেনকে গুলি করে হত্যার সাত মাস পার হতে চললেও অভিযুক্ত হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল এখনো অধরা। উদ্ধার হয়নি হত্যায় ব্যবহূত পিস্তল ও গাড়ি। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নিহতের স্বজনরা। তারা বলছেন, পুলিশকে ম্যানেজ করেই সোহেল ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তবে পুলিশ বলছে, সোহেলকে ধরতে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, ৩২ বোরের পিস্তল দিয়ে রিয়াদকে গুলি করা হয়। ওই অস্ত্রের লাইসেন্স সোহেলের ছিল না। হত্যায় ব্যবহূত পিস্তল ও পাজেরো গাড়িটি জব্দ করা যায়নি। তবে এজাহারভুক্ত আসামি জসীম ও খবির গ্রেফতার হয়েছে। মূল আসামি সোহেলকে ধরতে অভিযান চলছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জসীম ও খবির বলেন, মালিক সোহেলের নির্দেশে তারা রিয়াদকে খুঁটিতে বেঁধে মারধর করেন। একপর্যায়ে সোহেল নিজেও বেধড়ক পেটায়। কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তল বের করে সোহেল গুলি চালায় রিয়াদকে। এতে ঘটনাস্থলেই রিয়াদের মৃত্যু ঘটে। নিহতের স্বজনরা বলছেন, সোহেল টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে চেষ্টা করছেন। তারা বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিচ্ছেন। গ্রেফতার এড়াতে সংশ্লিষ্টদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে চলেছেন। এমনকি তাকে গ্রেফতার করতে না পারার অজুহাতে মামলার চার্জশিট আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। পুলিশ বলছে, সোহেল গ্রেফতার হলেই এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। রিয়াদের স্বজনরা বলছেন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায় সোহেলের সম্পৃক্ততা ছিল। তার হোটেলেই হাতবদল হতো অস্ত্র আর মাদক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে সোহেলের ভালো যোগাযোগ ছিল। সে কারণে মতিঝিলের মতো জায়গায় দিনের পর দিন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে গেলেও বেগ পেতে হয়নি তাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেই যোগাযোগ সোহেলের এখনো রয়েছে। এ কারণেই তাকে ধরা হচ্ছে না। ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেহাদ হোসেন বলেন, সোহেলের অপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। প্রভাবশালীদের ম্যানেজের চেষ্টা করলেও সে সফল হবে না। সুষ্ঠুভাবেই মামলার তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। তাকে ধরতে সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগিরই ভালো ফল আসবে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত পিস্তল ও গাড়ি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি। নিহতের ভাই রিপন হোসেন বলেন, সোহেলকে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। লোকজন তাকে ঠিকই দেখে, কিন্তু পুলিশ খুঁজে পায় না। নিহতের দাদা আবদুল মমিন বলেন, সোহেলকে ইচ্ছা করেই গ্রেফতার করছে না পুলিশ। কারণ বরাবরই পুলিশের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, এখনো আছে। নইলে এতদিন ধরে তিনি পালিয়ে থাকতে পারতেন না।

গত বছর ২৭ অক্টোবর রাতে পুরান ঢাকার স্বামীবাগ মিতালী স্কুল গলির ৭৩ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় রিয়াদকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দিতে ছিনতাই নাটক সাজিয়ে ফিল্মি গল্প তৈরি করে সোহেল। এ ঘটনায় নিহতের ভাই রিপন বাদী হয়ে ঘরোয়া মালিক সোহেল এবং দুই কর্মচারী জসীম ও খবিরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে দেয় পুলিশ।

সর্বশেষ খবর