মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
ভ্যাট নিয়ে দুই মন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠক

বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন ‘অল আর ফাইন’

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভ্যাট আইন নিয়ে সরকার কোন পথে যাচ্ছে সেটি গতকাল পর্যন্ত খোলাসা করেননি নীতি-নির্ধারকরা। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ বিষয়ে একটি সমাধানের পথেই হাঁটা হচ্ছে। গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসার পর সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘অল আর ফাইন...। কোনো টেনশন নেই।’

অর্থমন্ত্রীর দফতরে গতকাল সরকারের এই দুই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এবং এনবিআরের দুই সদস্য ফরিদউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর হোসেন অংশ নেন। প্রথম দফা বৈঠক বেলা ২টার দিকে শেষ হলে বাণিজ্যমন্ত্রী এবং দুই সিনিয়র সচিব নিজ নিজ দফতরে চলে যান। এ সময় অর্থমন্ত্রীর কক্ষে থেকে যান এনবিআরের দুই সদস্য। আধ ঘণ্টা পর অর্থমন্ত্রী লাল টেলিফোনে আবারও বাণিজ্যমন্ত্রীকে তার কক্ষে আসার অনুরোধ জানান। এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী তার দফতর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দ্বিতীয়বার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। সে সময় বৈঠকে দুই মন্ত্রীর সঙ্গে শুধু এনবিআরের দুই সদস্য ছিলেন।

প্রথম দফা বৈঠকে ভ্যাট বিষয়ে কী আলোচনা হলো জানতে চাইলে অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি আমার ইস্যু নয়। যা বলার এনবিআর বলবে।’ বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনিও এ বিষয়ে কিছু বলেননি। বৈঠকের ইস্যু সম্পর্কে সচিব বলেন, ‘আমরা জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি।’

সূত্রগুলো জানায়, ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, ভ্যাট আইন কার্যকর হলে নিত্যপণ্যসহ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে। আসছে বাজেট থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করার কথা রয়েছে। বাজেটের পরপরই শুরু হবে রমজান। ফলে ভ্যাটের কারণে রমজানেও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালে ভ্যাট আইন জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর এটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৫ সালের জুন থেকে ভ্যাট আইন পুরোপুরি কার্যকর করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে আরও এক বছর সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে এ বছরের জুন থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের কথা। তবে এবারও ব্যবসায়ীরা ভ্যাট আইনের কিছু ধারা সংশোধনের দাবি তুলে বলছেন, অন্যথায় তারা আন্দোলনে যাবেন। প্রচলিত নিয়মে ছোট ব্যবসায়ীরা প্যাকেজ আকারে ভ্যাট দিয়ে আসছেন। নতুন আইনে প্যাকেজ তুলে দিয়ে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের কথা বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্যাকেজ ভ্যাট তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করে বলছেন, এতে পণ্য কিনতে ভোক্তাদের খরচ বেড়ে যাবে। বিষয়টি ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন। সূত্রগুলো জানায়, ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন তোফায়েল আহমেদ। আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছাতে অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার গণভবনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বৈঠকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও ভ্যাট আইন চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ধরনের নির্দেশনার পর রবিবার এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। শেষে গতকাল দুপুরে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আইডিবির বোর্ডসভায় যোগ দিতে আজ (গতকাল) রাতেই জাকার্তার উদ্দেশে রওনা দেবেন অর্থমন্ত্রী। এদিকে প্রধানমন্ত্রীও দেশের বাইরে আছেন। ফলে আজ-কালের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা নেই। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর ভ্যাট সমস্যা সমাধানে একাধিক বিকল্প উল্লেখ করে একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরবেন মুহিত। এরপর শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুসারেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন তিনি।

সর্বশেষ খবর