বুধবার, ২৫ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভারতীয় পত্রিকায় বাংলাদেশের পিয়াজের ঝাঁজ

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশে পিয়াজের অযৌক্তিক মূল্য নিয়ে প্রতিবেদন বেরিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক পঠিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায়। তাতে দুই দেশের নিত্যপণ্যের তুলনামূলক মূল্য তুলে ধরে দেখানো হয়েছে কীভাবে আমদানিমূল্যের চার গুণ দামে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশে। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো— ‘ভারতের পিয়াজ বাংলাদেশে যাচ্ছে আট টাকা কেজি দরে। বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। খুচরা বিপণনে দাম বেশি হয়। তাই বলে তফাত এতটা! কেনা দামের চার গুণ! শুল্ক মূল্য ধরে ১৬ টাকাই ঠিক ছিল। কলকাতায় এখন ১৬ টাকাই কিলো। এক সময় পিয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় উঠেছিল। টাস্ক ফোর্সও টেনে নামাতে পারেনি। পিয়াজের ঝাঁজে অস্থির মানুষ পিয়াজ না খাওয়ার সংকল্প নিয়েছিল। পিয়াজের ফাটকাবাজি রোখা খুবই কঠিন। তার ওপর ফলন কম হলে তো হয়েই গেল। গোটা ভারতে শুধু নয়, বিদেশেও পিয়াজ যোগায় মহারাষ্ট্রের নাসিক। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে হয় পিয়াজের আশায়। তারা ডোবালে ভাসাবে কে। বাংলাদেশে যে পিয়াজ হয় তার সাইজ ছোট। মশলাদার ভারী রান্নায় চলে না। দরকার নাসিকের পিয়াজ। খুঁদে পিয়াজের দামও বেশি। ৪৫ টাকা কেজি। উৎপাদন ভালো। বছরে চাহিদা ২২ লাখ টন। বাংলাদেশের উৎপাদন ১৭ লাখ টন। এ বছর আমদানি পাঁচ লাখ টন। জোগান যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কিনতে গিয়ে হাত পুড়ছে।

রমজানে পিয়াজের চাহিদা বাড়বে। তার আগেই ১০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি। আগেভাগে দাম বাড়িয়ে মুনাফার গ্যারান্টি। রসুনও নাগালের বাইরে। বাংলাদেশের রসুন ১০০ টাকা কিলো। চীনের রসুন ২০০ টাকা। দামের ফারাক গুণগত কারণে। তা হলেও, চীনের রসুন এতটা ওপরে উঠবে কেন। চীন থেকে আমদানি ১৩০ টাকায়। সেখানেও যুক্তি, পিয়াজের চেয়ে রসুনের বিক্রি কম। এক কেজি পিয়াজ নিলে রসুন নেয় ১০০ গ্রাম। এত কম বিক্রিতে দাম একটু বেশি না হলে নাকি চলে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথায় কে পারবে। তারা বাজারে নামে কোমর বেঁধে। ক্রেতারা শরমে মরে।

ঢাকা-কলকাতা বাজার দরে খুব একটা তফাত নেই। কেনা মানে জ্বলন্ত আগুনে হাত দেওয়া। বাঙালি ঝাল খেতে ভালোবাসে। তার ওপরও কোপ। লঙ্কা কদিন আগে ছিল ৬০, এখন ১৪০। লঙ্কা হয় মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বৃষ্টি নেই, সেচ নেই। গাছ শুকিয়েছে। লঙ্কার ঝালও বেড়েছে। আলু ১৪ থেকে এক লাফে ২৮ টাকা। বেগুন, ঝিঙে ৪০ টাকা। টমেটো, উচ্ছে ৫০। পটল, ঢেঁড়শ ৩০?। মুরগির কেজি ১৯০, রুই ১৬০, কাতলা ২০০ টাকা। গরমে লাইম ওয়াটার খাওয়ার উপায় নেই। পাতিলেবু ৪ টাকা। দাম আর দম দুই-ই বাড়ছে আদার। কেজি ১২০ টাকা। ঢাকাতে দাম উনিশ-বিশ।

রমজানে সবচেয়ে বেশি দরকার ডাল, ছোলা, চিনি, পিয়াজ, রসুন, খেজুর। তাদের দেমাক দেখে কে। খেজুরের মেজাজ বোঝা দায়। ১২০ থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা। চাহিদা ১৫ হাজার টন। আমদানি ২০ হাজার টন। টান পড়ার কথা নয়। তাতেও আয়ত্তের বাইরে। মসুর ডালের উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার টন। আমদানি ১ লাখ ৩৬ হাজার টন। চাহিদা ৩ লাখ টনের বেশি। উপযুক্ত সরবরাহ সত্ত্বেও দামে আগুন। আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি ৬৮, বাংলাদেশে ১৫৫ টাকা। ছোলা ৭৫ থেকে বেড়ে ৮৫ টাকা।

অবস্থা সামাল দিতে মাঠে নেমেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি। রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য তারা বিক্রি করবে ১৭৪টি ট্রাকে। ন্যায্য দামে মিলবে প্রয়োজনীয় সব কিছুই। তা না হয় হলো। বাজার কি চড়তেই থাকবে। পকেট কাটা বন্ধ হবে না। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েও পার পাবে। এখনো পর্যন্ত একটাই সান্ত্বনা, ভোজ্য তেলের দাম বাড়েনি। শুধু তেলে তো রান্না হয় না। আরও যে অনেক কিছু চাই।’

সর্বশেষ খবর