বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিচার বিভাগ আশা জাগাচ্ছে মানুষের

মাহমুদ আজহার

বিচার বিভাগ আশা জাগাচ্ছে মানুষের

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল

বিচার বিভাগ এখন মানুষের মধ্যে নতুন করে ‘আশা’ জাগাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেছেন, ‘কিছু কিছু রায়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তিভাব আসছে। আমরা দেখেছি, শাসক দলের নেতা-কর্মীরা নদীর পাড় দখল ও ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করে ফেলেছিল। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি কড়া নির্দেশনা রয়েছে। তবে সরকার কতটুকু বাস্তবায়ন করবে, সেটা ভিন্ন বিষয়। এখন সর্বোচ্চ আদালত থেকে বলা হয়েছে,   ফুটপাথে মোটরসাইকেল উঠবে না। উল্টোপথে কোনো গাড়ি চলবে না। এগুলো জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। এ জন্য আদালতকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।’

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপির যুববিষয়ক এই সম্পাদক। যুবদল সভাপতি বলেন, ‘এখন আদালত মন্ত্রী-এমপিদের ডাকছে। তাদেরও জরিমানা করেছে, দণ্ড দিয়েছে। মোবাইল কোর্ট বসিয়ে উল্টোপথে গাড়ি চললে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য ভেজালে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়েছে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার সংক্রান্ত ৫৪ ধারা ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। এভাবেই তো বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়। তবে সরকার আদালতের নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন করবে বা অবজ্ঞা করবে— তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।’ আলাল বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা দেয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচার বিভাগ পরিপূর্ণ স্বাধীন ছিল। তখন বিচারপতি নিয়োগ, বদলি সবকিছুই সুষ্ঠুভাবে চলছিল। শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল করে সবকিছুই নিজের কাছে নিয়ে নেন। পরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এসে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের হাতে সব ক্ষমতা ফিরিয়ে দেন। তিনি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে দেন। সেখানে বিচারপতি ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেটা আওয়ামী লীগের পছন্দ হচ্ছে না। আদালতের মাথায় একটা খড়গ ঝুলিয়ে দিতে তাই আবারও ষোড়শ সংশোধনী আনে। অবশ্য হাইকোর্ট সেটাকে খারিজ করে দিয়েছে। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আপিল করেনি। আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষের পক্ষেই সর্বোচ্চ আদালত থাকবে। সরকারের আবেদন টিকবে না। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে দাবি করে আলাল বলেন, এ সরকার নতুন একটা আইন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কিংবা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কোনো কটূক্তি করা হলে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দুটো বিধানই রাখছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে আওয়ামী লীগই। বর্তমান সরকারের আমলে ৭ম শ্রেণির বইতে লেখা আছে, ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। অথচ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। উনি দেশে ফিরেছেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। বিকৃত তারা করে রেখে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তো এই সরকারই বিকৃত করছে।

সম্মান শ্রেণিতে পড়ানো হচ্ছে, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মাওলানা আকরাম খাঁর সঙ্গে মিলে ১৯২৩ সালে হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির জন্য দিল্লিতে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। আমরা জানি শেখ মুজিবের জন্ম হলো ১৯২০ সালে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়ে গেল, এখন সবাই চুপচাপ। কারও এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই, তদন্তও নেই। এমনকি যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানেও তদন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। হলমার্ক, শেয়ার কেলেঙ্কারি, সোনালী ব্যাংক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনি থেকে শুরু করে যত অর্থ পাচার হয়েছে তার সবগুলোর বিচার প্রক্রিয়া থমকে গেছে। সবাই চুপচাপ। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে পানামা কেলেঙ্কারি। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, তার স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালকসহ গোটা পরিবার এর সঙ্গে জড়িত। সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান এমপির ভাই ও তার পরিবার জড়িত। এগুলো নিয়ে সরকার কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে জোরদার কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। আমরা অরাজকতার চূড়ান্ত পর্যায়ে অবস্থান করছি। একদিকে জনগণের অর্থ লোপাট হচ্ছে, অন্যদিকে দিনে দিনে লাশের সারি বাড়ছে। শিশু হত্যা হচ্ছে। নারী ধর্ষিত হচ্ছে। তনু হত্যার ময়নাতদন্তকারীর প্রধান চিকিৎসককে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ তার জিডি নেওয়া হচ্ছে না। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে গণতন্ত্রের উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি থেকে শুরু করে সব সেক্টরে দুর্নীতি আর লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছে সরকার। এটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, কোনো তত্পরতা, কোনো হুঙ্কার কোনোটাই এ সরকার বাস্তবায়ন করতে পারছে না। দলীয়করণের কারণে গোটা প্রশাসন ধ্বংসের পথে। এখন মসজিদের মুয়াজ্জিন খুন হচ্ছেন, ইমাম খুন হচ্ছেন, পীর সাহেব খুন হচ্ছেন, হিন্দু পুরোহিত খুন হচ্ছেন, খ্রিস্টান পার্দি খুন হচ্ছেন, ভিন্নমতাবলম্বী খুন হচ্ছেন, মুক্তচিন্তার ব্লগার খুন হচ্ছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছেন, আওয়ামী লীগ হিন্দুদের জমি দখল করা, নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট করা এবং দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করা মৌলিক অধিকার বলে মনে করে। যা বাংলাদেশে ৪৫ বছরে শুনিনি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, সম্প্রতি মন্ত্রিসভার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, এ বছর এ পর্যন্ত ৩৭টি খুন হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টির সঙ্গে জেএমবি জড়িত। ৮টির সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত। ৪টির সঙ্গে অন্যান্য জঙ্গি ও সন্ত্রাসী জড়িত। অথচ একই দিনে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের কাছে বললেন, এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াত জড়িত এবং বিএনপি তাদের আশ্রয়দাতা। আমরা কার কথা বিশ্বাস করব। তারা কোনো কিছুর সমাধান চাচ্ছে না। সবকিছুতেই তালগোল পাকিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা ছাড়া আর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

বিএনপি কি যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি যে সব ক্ষেত্রে পারছে তা বলব না। কিন্তু বিএনপি সর্বাত্মক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপি বারবার জাতীয় সংলাপের কথা বলছে। সব সমস্যা পুরো জাতিকে আক্রান্ত করেছে। এ জন্য জাতীয় পর্যায়েই সংলাপ দরকার। বারবার আমাদের চেয়ারপারসন সেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সরকার ভ্রুক্ষেপ করছে না, তাচ্ছিল্য করছে। আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে এর প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছি। রাজপথে নামলেই গুম, খুন, মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। দায়িত্ব পালনে পদে পদে বিএনপি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করছে সরকার। তারা বিএনপির ওপর পেশিশক্তি ব্যবহার করছে। সবকিছু সামলে উঠে আমরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালাতে পারছি না এসব কারণেই।

সর্বশেষ খবর