শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ ও সোনালী ব্যাংকের অর্থ চুরিতে একই চক্র

গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য যোগসূত্র খুঁজছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ও সোনালী ব্যাংকের অর্থ চুরিতে একই চক্র

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ যারা চুরি করেছে একই অপরাধী চক্র ২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংকের অর্থ চুরি করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাইবার আক্রমণ করে সোনালী ব্যাংকের লন্ডন শাখার ওই অর্থ চুরি হওয়ার পর তা উদ্ধার করা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সেই অপরাধী চক্রই নিউইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করেছিল। দুই সাইবার হামলার যোগসূত্র খুঁজছে পুলিশ। এ ঘটনার বাংলাদেশের তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্স প্রতিবেদন করেছে।

সোনালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, যে কৌশলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়েছে একই কৌশলে ২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংকের অর্থও চুরি যায়। সোনালী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও সুইফট কোড ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধের ভুয়া অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এখন পুরো বিষয়টির নতুন করে পর্যালোচনা চলছে। ওই সময় বিষয়টি সুইফটকে জানানোও হয়েছিল। সোনালী ব্যাংকের একটি সূত্র বলছে, তুরস্কে পাচার হওয়া ওই অর্থের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সে সময় হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড জানতে সোনালী ব্যাংকের কম্পিউটারে সফটওয়্যার বসিয়ে রেখেছিল। এরপর সেই পাসওয়ার্ড দিয়ে সুইফটের কাছে ভুয়া বার্তা পাঠানো হয়। পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেফতারও করে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংকের লন্ডন শাখা থেকে হ্যাকাররা সুইফটের (টাকা স্থানান্তর পদ্ধতি) পাসওয়ার্ড চুরি করে আড়াই লাখ টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেয়। ব্যাংকের সুইফট সিস্টেম হ্যাক করে ভুয়া পেমেন্ট মেসেজ দিয়ে এ অর্থ চুরি করে তারা। বিষয়টি জুনে ঘটলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রায় এক মাস পর টের পায়। পরে তদন্তে দেখা যায়, লন্ডন থেকে তুরস্কের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ওই অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যায় হ্যাকাররা। ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্ত করে অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। চুরি হওয়া টাকা এখনো উদ্ধার করতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। এ ঘটনায় সে সময় কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপকুমার দত্ত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বড় একটি গোষ্ঠী ওই সময় ব্যাংকে হামলা চালিয়েছিল। তিন বছর আগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত একই গোষ্ঠী বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করেছে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমি মনে করি হ্যাকাররা তিন বছর অপেক্ষা করে ফের বাংলাদেশে হ্যাকিং করবে এটা হতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র আছে বলে আমি মনে করি না।’ গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম হ্যাক করে নিউইয়র্ক ফেডে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায় আর বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনে।

ইকুয়েডরের ব্যাংকের হ্যাক করা ৯ মিলিয়ন ডলার হংকংয়ে : সাইবার হামলার মাধ্যমে ইকুয়েডরের একটি ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেওয়া ১২ মিলিয়ন ডলারের ৯ মিলিয়ন হংকংয়ের ২৩টি কোম্পানির মাধ্যমে লোপাট হয়েছিল। বাকি ৩ মিলিয়ন ডলারের কিছু অংশ দুবাই গেছে। গত বছর হ্যাকিংয়ের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে করা মামলায় এ তথ্য দিয়েছে ইকুয়েডরের ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আদালতে উত্থাপিত নথি ও আদালতের আদেশের অনুলিপি পর্যালোচনা করে রয়টার্স জানিয়েছে, হংকংয়ে নিয়ে যাওয়ার পর টাকাগুলো কোথায় গিয়েছিল তার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে আদালতের নথিতে। ইকুয়েডরের ব্যাংকো দেল অসত্রো (বিডিএ) কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের প্রথম দিকে হংকংয়ের আদালতে ওই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে। তাদের অভিযোগ, এ কোম্পানিগুলো অনৈতিকভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েল ফার্গোতে রাখা আমানত থেকে এ অর্থ চুরি হয়। সাইবার চুরির এ ঘটনায়ও সুইফট প্লাটফরম ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় হংকংয়ের পাশাপাশি নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করেছে ইকুয়েডরের ব্যাংকটি। অর্থ ছাড়কারী প্রতিষ্ঠান ওয়েলস ফার্গোকে বিবাদী করেছে তারা। সাইবার চোরেরা বিডিএ থেকে সরিয়ে নেওয়া ১২ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৯ দশমিক ১৩৯ মিলিয়ন ডলার হংকংয়ে এইচএসবিসি ও হ্যাং সেং ব্যাংকের চারটি কোম্পানির অ্যাকাউন্টে নেয়। ওই চার কোম্পানি থেকে অন্তত ৩১ লাখ ডলার ১৯টি অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়া হয়, অর্থাৎ হংকংয়ে নিবন্ধিত আর একগুচ্ছ কোম্পানিতে ওই অর্থ যায় বলে নথিতে বলা হয়।

সর্বশেষ খবর