শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের সাফল্যের কাহিনী শুনল বিশ্ব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সাফল্যের কাহিনী শুনল বিশ্ব

জাপানে জি-৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের মধ্যে (বাম থেকে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো —এএফপি

বিশ্বের সাত পরাশক্তির জোট জি-৭ সম্মেলনে আউটরিচ মিটিংয়ে বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কাছে বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কাহিনী শুনেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডার মতো দেশগুলোর রাষ্ট্রনায়করা। সাফল্যের কারণেই শেখ হাসিনাকে গতকাল জাপানের নাগোয়ায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আউটরিচ মিটিংয়ে স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং উন্নত অবকাঠামো বিনির্মাণে সহযোগিতাবিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশকে নেতৃত্বের সুযোগ দেয় ধনী ও প্রতাপশালী রাষ্ট্রের এই জোট। নাগোয়ার কাশিকো দ্বীপে শিমা কানকো হোটেলে এ বৈঠকে ছিলেন জি-৭-এর মূল নেতৃত্বে থাকা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মরকেল, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোল্ড টাস্ক, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন জাঙ্কার প্রমুখ। দেশের বার্তা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জি-৭-এর নেতাদের নিজেদের সম্মেলনের পরদিন গতকাল সকালে শুরু হয় আউটরিচ মিটিং। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, ইইউর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এশিয়া ও প্যাসিফিকের বিশেষ আমন্ত্রিতরা। ভবিষ্যৎ বিশ্ব অর্থনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করা এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। পরে মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া যে দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের সবাই কোনো না কোনো অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্যই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর গ্লোবাল ইমেজ এবং এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্তের একটা স্বীকৃতি। বৈঠকের দুটি সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মূলত চারটি বিষয় নারীর ক্ষমতায়ন, মানসম্মত অবকাঠামো, জলবায়ু ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কথা বলেছেন। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, উন্নত দেশগুলো যদি কারিগরি সহায়তা, অর্থায়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তাহলে বিশ্ব আজকে যেসব সমস্যায় পড়েছে, তা আর হবে না। বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি তৈরি পোশাকশিল্প এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণার কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিবেশবান্ধব জ্বালানির গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেছেন। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বলতে গিয়ে ৩০ হাজার মাতৃসদনের মাধ্যমে নারীদের সহায়তার কথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ যে উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি অবদান রাখে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গুণগত স্বাস্থ্যসেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের জানান শেখ হাসিনা। নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং রাজনীতিতে নারী— এই জায়গায় বাংলাদেশ একটা অবস্থান তৈরি করেছে। নারীর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’-এর কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের কথা বলতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী নারীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জি-৭-এর মূল নেতারা ছাড়াও আউটরিচ মিটিংয়ে অংশ নেন শাদের প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস ইতনো, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো ওইদোদো, লাওসের প্রধানমন্ত্রী ড. সিসোলিথ, পাপুয়া নিউগিনির প্রধানমন্ত্রী পিটার ও’নেইল, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট শ্রীসেনা, ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী জুয়ান ফুক, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, আইএমএফের এমডি লাগারদে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ও এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও।

পরে বিকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় ফিরে যান নাগোয়ার হোটেল হিলটনে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানী টোকিও যাবেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন করবেন। আগামীকাল সকালে জাপানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রাতরাশ বৈঠকের পর জাপান ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা। দুপুরে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আছে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের।

বাংলাদেশের সাফল্যের অংশীদার হতে চায় ব্রিটেন : দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, বাংলাদেশের সাফল্যের অংশীদার হতে চায় ব্রিটেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ উন্নীত করায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এ আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। সচিব জানান, আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিস্ময় প্রকাশ করেন ডেভিড ক্যামেরন। তিনি জানতে চান, অব্যাহত এ অর্জন কীভাবে সম্ভব হলো? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রবৃদ্ধি একবারে ৬ থেকে ৭ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন টানা ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। এরপর  ১-২ পয়েন্ট করে ধাপে ধাপে এগিয়ে তবেই ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে ব্রিটিশ বিনিয়োগ নিয়েও দুই নেতা কথা বলেছেন।

সর্বশেষ খবর