মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

এই কমিশন আর কত

জুলকার নাইন ও গোলাম রাব্বানী

এই কমিশন আর কত

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সহিংস নির্বাচন পরিচালনার তকমা পেয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। সংবিধানে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হলেও তা ব্যবহার না করার অভিযোগে অভিযুক্ত এ কমিশন। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শতাধিক প্রাণহানির পরও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই কমিশনের। এর আগে তারা দশম সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ঢাকার দুটিসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক জাল ভোট, কারচুপি, দখল, ব্যালট ছিনতাইসহ নানা অনিয়মের কারণে চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, আর কত দিন দায়িত্বে সিইসি রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন? কিন্তু সাংবিধানিক পদে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারের আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ আছে। সে পর্যন্তই তারা দায়িত্বে থাকছেন। এর আগে শুধু পদত্যাগ করলেই নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আরও বেশ কিছু নির্বাচন পরিচালনাও করবে বর্তমান কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে অবশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে বেশির ভাগ নির্বাচন কমিশনই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মতো ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সব মত উপেক্ষা করে স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে দলীয়ভাবে করায় অতীতের সহিংসতার রেকর্ড অতিক্রম করেছে সিইসি রকিবউদ্দীনের কমিশন। এমন চলতে থাকলে নির্বাচন কমিশন নামক প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে জনগণের আস্থা পুরোপুরি চলে যাবে। তখন কার্যকর কোনো   কমিশনও সঠিকভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় জানিয়েছে, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজী রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসি নিয়োগ পায়। ৯ ফেব্রুয়ারি তারা শপথ নিলেও ইসিতে যোগ দেন ১২ ফেব্রুয়ারি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান প্রথমবারের মতো সব দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে এ পাঁচ সদস্যের ইসি গঠন করেছিলেন। তাদের নিয়াগ অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলীর মেয়াদ শেষ হবে ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে সেই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়াবলিতে বলা হয়েছে : ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ ধারা (৫)-এ বলা হয়, ‘সুপ্রীম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না।’ ধারা (৬)-এ বলা হয়, ‘কোন নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।’ ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাংবিধানিকভাবে ২০১৯ সালের শুরুতে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান মেয়াদ শেষে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসি পুনর্গঠন হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বড় নির্বাচনগুলোর মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ ক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। জানুয়ারিতে শেষ হবে কুমিল্লা সিটির মেয়াদও। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ব ১৮০ দিনের মধ্যে এ নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। চলতি বছরের শেষ দিকেই এ দুই নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বর্তমান ইসির অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কমিশনের কন্ট্রোল না থাকার কারণেই সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে। সব মিলে ইসির মনিটরিং ভালো ছিল না। তারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনী সহিংসতার দায় নির্বাচন কমিশনের ওপরও রয়েছে। তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, দায়সারাভাবে কাজ করেছে। তাদের কাছে যে ক্ষমতা ছিল, তা ব্যবহার করেনি। এ ছাড়া চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অনিয়ম-সংঘাত নতুন সমস্যার সৃষ্টি করছে। নির্বাচন হচ্ছে সমস্যা সমাধানের পথ। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের অগাধ ক্ষমতার ব্যবহার না করায় এ নির্বাচনকে কলুষিত করেছে। চরম সংকটের সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনী সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে।

বর্তমান ইসির অধীনে যত নির্বাচন : বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে সাড়ে ৬ হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন-২০১৩, নবম জাতীয় সংসদের শূন্য ঘোষিত সাতটি আসনের নির্বাচন, দশম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন (৩০০ আসনে)। দশম জাতীয় সংসদের শূন্য ঘোষিত আসনের কয়েকটি এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন। কমিশনের অধীনে স্থানীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো হলো— বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে সাধারণ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন উপনির্বাচন তিনটি, উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ৪৮১টি, পৌরসভার তিন ধাপের ২৫৩ পৌরসভা, উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন, পৌরসভা উপনির্বাচন ৫৯টি, ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন ৪৬টি, ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচন ৯৪৮টি। এ ছাড়া চলমান দেশব্যাপী ছয় ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে নির্বাচন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর