বুধবার, ১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

সম্পদ বানানোর মেশিন তিতাস গ্যাসের সিবিএ

মোস্তফা কাজল

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে সিবিএ নির্ভরতায়। অভিযোগ রয়েছে, পুরো তিতাস অফিসকে জিম্মি করে একটি সিন্ডিকেট নানা ফন্দিফিকির ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। তিতাসের অফিসার থেকে শুরু করে পিয়ন-গার্ড পর্যন্ত সবাই তাদের অবৈধ ক্ষমতার দাপটে ভীতসন্ত্রস্ত। ফলে তিতাসের গ্যাসলাইনের অবৈধ সংযোগ, মিটার টেম্পারিং, তেল চুরি, লোড বৃদ্ধি, বদলি ও প্রমোশন বাণিজ্যের নামে নানা ধরনের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রতিষ্ঠানে কেউ কেউ সামান্য গাড়ির ড্রাইভার ও মিটার রিডার থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানে রাজধানীতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কেউ কেউ আবার নারায়ণগঞ্জ তিতাস অফিসকে নিজের পারিবারিক সাম্রাজ্য বানিয়ে অবাধে ভোগদখল করছেন। এ ছাড়া কেউ কেউ অবৈধভাবে চাকরি দিয়েছেন নিজের ছেলে, ভাই আর আত্মীয়স্বজনদের। অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ ও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলে শীর্ষ ম্যানেজমেন্টের মুখ বন্ধ করে রেখেছেন বলে জানা গেছে। সিবিএর এসব সাবেক ও বর্তমান নেতার কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যাসহ দুদকে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ দুদকে অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিগত ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও সিবিএ নেতাদের কয়েকজন তিতাসের টাস্কফোর্স কার্যালয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটক ছিলেন। নেতাদের মধ্যে মোতালেব হাওলাদার, সাইফুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন ও নুরুল হক মোল্লা অন্যতম। এর মধ্যে ক্লাস থ্রি পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে তিতাসের গাড়ি ড্রাইভার পদে যোগদান করলেও ক্ষমতাবলে মোতালেব হাওলাদার বাগিয়ে নিয়েছেন সুপারভাইজারের পদ। অন্যরা এখন লাখ লাখ টাকার সম্পদের মালিক। উত্তর দনিয়া আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়সংলগ্ন মোতালেব ও তার ভাই জাহাঙ্গীর হাওলাদার তৈরি করেছেন দুটি আলিশান বহুতল ভবন। নাম প্রকাশ না করে এক কর্মকর্তা জানান, দুই বছর আগে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার অজুহাতে সংশ্লিষ্ট অফিসের সিবিএ নেতা মোতালেব হাওলাদার, সাইফুল, দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, কাজিমউদ্দিন, নজরুল ও এনামুল সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জের আওতাধীন হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। সোনারগাঁয়ের অনেক এলাকার শিল্পকারখানায় অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা নিয়ে বাইপাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং পিডিসি সংযোগ অন্যত্র শিল্পকারখানায় বিক্রি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সিবিএ নেতা ও মেসার্স গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকানার মালিক ইমরান দেওয়ান মানিক এ চক্রের প্রধান বলে জানা গেছে। তিনি পিডিসি সংযোগ অন্যত্র বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এদিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ বৈধকরণের কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের ঘোষণা মোতাবেক না করে নতুন সংযোগ দেওয়ায় সোনারগাঁয়ে সম্প্রতি আগের মতো গ্যাস পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা। এ এলাকার ভুক্তভোগী গ্রাহক জসিম উদ্দিন বলেন, কর্তৃপক্ষের ঘোষণা মোতাবেক সঠিকভাবে সংযোগ দিলেও গ্যাসের চাহিদা আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। এসবের অজুহাতে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নামধারী ঠিকাদাররা গ্যাস সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার অজুহাতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা জনপ্রতি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এখনো গ্যাস সংযোগ নিতে রাতের আঁধারে অবৈধ বহু পাইপলাইন টানানো হয়েছে সোনারগাঁয়ে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার ইমরান দেওয়ান মানিক অবৈধ সংযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অফিস কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফারফা করেই নতুন পাইপলাইন বসানো হচ্ছে স্বীকার করেন তিনি। তিতাস গ্যাস কর্মচারী ইউনিয়ন— সিবিএ (রেজি. নম্বর-বি-১১৯৩) সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মী তদবির ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর যেসব কর্মচারী অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের সবাইকে চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। পাশাপাশি শূন্যপদে যোগ্য কর্মচারীদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর