ঢাকার আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে আটজনকে হত্যার দায়ে জঙ্গিসহ ছয় আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক আসামিকে যাবজ্জীবন ও দুই আসামিকে তিন বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুই আসামিকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। গতকাল ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম কুদ্দুস জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— বোরহান উদ্দিন, সাইফুল ওরফে আল আমিন, মাহফুজুল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে জামিল, জসিমউদ্দিন, মিন্টু প্রধান ও পলাশ ওরফে সোহেল রানা। আসামিদের মধ্যে শুধু পলাশ পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া আসামি উকিল হাসানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিন বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে আবদুল বাতেন ও শাজাহান জমাদ্দারকে। আর বেকসুর খালাস পেয়েছেন মোজাম্মেল হক ও বাবুল সরদার। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) খন্দকার আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, খুব দ্রুততম সময়ে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও এ রকম হওয়া উচিত। রায় ঘোষণার আগে ১০ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলায় ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। জঙ্গি অর্থায়নে তহবিল গঠনের জন্য এ ডাকাতি বলে গ্রেফতার আসামিরা জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার ১০ আসামির মধ্যে জেএমবির সাত সদস্য দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। আসামিদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মাহফুজুল। তার নেতৃত্বে ব্যাংক ডাকাতির ওই ঘটনা ঘটে। এর আগে গত বছর ২১ এপ্রিল দুপুরে সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে কমার্স ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ে হানা দেয় ডাকাত দল। এ সময় গুলি করে ও বোমা ছুড়ে হত্যা করা হয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহসহ সাতজনকে। পরে আহত আরও একজন মারা যান। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ। রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, এ ঘটনাটি শুধু প্রকাশ্য দিনের আলোয় ডাকাতি ছিল না, বরং এটি ছিল সুপরিকল্পিতভাবে আটজন বেসামরিক নাগরিককে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা। এর মধ্যে চারজনকে ব্যাংক কার্যালয়ের মধ্যেই কোনো ধরনের উসকানি বা প্রতিরোধ ছাড়া হত্যা করা হয়। বিচার চলাকালে পলাশ ছাড়া অন্যদের কাঠগড়ায় দেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের চেহারায়, অভিব্যক্তিতে, আচরণে অনুশোচনার চিহ্ন দেখিনি। পরিস্থিতির চাপে পড়ে তারা এ ঘটনা ঘটায়নি। সে কারণে সমস্ত সাক্ষী-সাবুদ ও পরিপাঠ্য বিবেচনা করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াই উপযুক্ত। এ ছাড়া অমানবিক, নিষ্ঠুর ও ক্রুর কায়দায় আটজন নির্দোষ মানুষকে হত্যার জন্য একটি জরুরি নজির সৃষ্টি দরকার। তাই অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনে এ রকম শাস্তি জরুরি।’