শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
আপিল বিভাগের রায়

বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। জমির মালিকানা না থাকা এবং জলাধার আইন লঙ্ঘন করে রাজধানীর হাতিরঝিলের দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প এলাকায় নির্মিত বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙতে পাঁচ বছর আগে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ওই রায়ের পর বিজিএমইএ ভবন কর্তৃপক্ষ লিভ টু আপিল করে। আপিলের সেই আবেদন খারিজ করে গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেয়। এর ফলে এই ভবনটি ভাঙতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকল না। প্রায় দুই দশক আগে বেগুনবাড়ী খালের ওপর নির্মাণ করা হয় ১৬ তলাবিশিষ্ট বিজিএমইএ ভবন। আপিল বিভাগের রায়ের পর এই মামলায় হাইকোর্টের অ্যামিকাস কিউরি মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, এই ভবনের কারণে হাতিরঝিল প্রকল্পের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর এই ভবনটি এখন ভাঙতে হবে। অপরদিকে বিজিএমইএর আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক রায়ের পর বলেন, হাইকোর্ট বলেছিল বিজিএমইএ ভবনটা ভেঙে দিতে হবে। অ্যাপিলেট ডিভিশন সেটা কনফার্ম করেছে। তার মানে বিল্ডিংটা ভেঙে দিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এই বিল্ডিংটা ভেঙে দিলে অর্থনীতিতে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ আমাদের পুরো অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর। তিনি বলেন, রিভিউ করবে কি করবে না, সে বিষয়ে বিজিএমইএর বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হবে। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে রিভিউর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ছাড়া হাতিরঝিলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মুনিরউদ্দিন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। রুলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইকবাল কবির (বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি) ও মনজিল মোরসেদের বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (পরে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন) এবং বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে তা ভাঙার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আপিলে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন। পরে এ সময়সীমা বাড়ানো হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের দেওয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছর ২১ মে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর