শিরোনাম
শনিবার, ৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
দুই দলের রাজনীতি

সাংগঠনিক কাঠামোয় পরিবর্তন আসছে আওয়ামী লীগে

রফিকুল ইসলাম রনি

সাংগঠনিক কাঠামোয় পরিবর্তন আসছে আওয়ামী লীগে

ইতিহাসের সেরা কাউন্সিলের জোর প্রস্তুতি চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। সম্মেলন প্রস্তুতির সব খোঁজখবর নিতে শনিবার সকালে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক ডেকেছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনে পদপদবিতে বড় ধরনের রদবদল না হলেও মন্ত্রিসভার মতো দলেও ঠাঁই পাবেন না বিতর্কিত ও হাইব্রিড নেতারা। দলের গঠনতন্ত্রসহ সাংগঠনিক কাঠামোয় বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্রমতে, এবারের কাউন্সিলে তিন ক্যাটাগরিতে বিন্যস্ত নেতাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। এর মধ্যে প্রথম কাতারে আছেন অনিয়ম-দুর্নীতি ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের দায়ে সমালোচিত নেতা। দ্বিতীয় সারিতে রয়েছেন হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বেফাঁস মন্তব্যকারীরা। যার খেসারত দল ও সরকারকে চরমভাবে দিতে হয়েছে। আর তৃতীয় স্তরে আছেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া, শারীরিকভাবে অসুস্থ একাধিক নেতা। যারা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অনেকটাই অক্ষম হয়ে পড়েছেন। ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে মহানগর ও জেলা কমিটির সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে ব্যর্থ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টদেরও। দলীয় সূত্রমতে, আগামী ১০ ও ১১ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল। ঈদুল ফিতরের পর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হবে কিনা, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা নেতাদের কৌতূহল ছিল। তবে গতকাল চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সৌদি আরব যাওয়ার আগে বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা পরিষ্কার করেছেন। বিকালে গণভবনে কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বিদায় জানাতে গেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ১১ জুন শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক ডাকতে নির্দেশনা দেন। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আফজাল হোসেন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী। সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে ওমর ফারুক চৌধুরী, আশরাফুন্নেছা মোশাররফ, নাজমা আক্তার, অপু উকিল, সাইফুর রহমান সোহাগ, জাকির হোসাইন প্রমুখ। সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। ১১ জুন দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক ডেকেছেন দলীয় সভাপতি। এ বৈঠকে কাউন্সিল ও অতিথিদের উপস্থিতি, তাদের আপ্যায়ন ও গঠনতন্ত্র সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য উপস্থাপন করা হবে। দলীয় সূত্রমতে, এবারের সম্মেলনে বিশ্ব রাজনৈতিক মাঠের প্রতি নজর রেখে আগামীতে দক্ষ, যোগ্য, ত্যাগী, পরিশ্রমী তরুণ নেতৃত্ব দেখতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ২০১২ সালের সম্মেলনে ওই পরিকল্পনা সফল হওয়ায় এবারের কাউন্সিলেও সেই চমক দেখানোর চিন্তাভাবনা করছেন তিনি। বিগত কাউন্সিলগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনগুলোর প্রতিটিতেই কোনো না কোনো নতুনত্ব দেখিয়েছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটা কখনো করেছেন বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে আবার কখনো ত্যাগী ও কর্মঠ নেতাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে। তারুণ্যনির্ভর ও নারীর অংশগ্রহণ বাড়িয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমেও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এবারেও সেই চমক দিতে যাচ্ছেন দলীয় সভাপতি। তবে ব্যাপক আকারে পদচ্যুত না হলেও পরিবর্তন হবে বিভিন্ন স্তরে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বরাবরই আওয়ামী লীগের কমিটিতে ত্যাগী, মেধাবী ও ক্লিন ইমেজধারীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। এবারেও তাই করা হবে। আর যারা নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছেন ও দায়িত্বে থেকে দক্ষতা দেখাতে পারেননি তারা বাদ পড়বেন— এটাই কাউন্সিলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

দলীয় সূত্র বলছে, ১১ জুলাই জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন হতে যাওয়া কমিটিতে যেমন সমালোচিত-বিতর্কিত ও দলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে ব্যর্থরা বাদ পড়বেন, তেমন ঠাঁই পাবেন তরুণ ইমেজধারী ও কর্মঠরা। শীর্ষ পদে উঠে আসবেন অধস্তন পদধারীরা। সম্পাদকমণ্ডলীর কিছু পদেও পরিবর্তন আসতে পারে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন পদ হারাতে পারেন। যেখানে নতুন মুখ হিসেবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করার আভাস পাওয়া গেছে। কমিটি গঠন ছাড়াও এবারের সম্মেলনে বেশ বড় অংশজুড়ে রয়েছে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন। গঠনতন্ত্র আরও যুগোপযোগী, আধুনিক ও উন্নত করতে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট উপ-পরিষদ কাজ শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে এ কমিটি কাজ করছে। এ সংশোধনীতে থাকছে নতুন পদ সৃষ্টি, সাংগঠনিক ইউনিট বাড়ানো, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া। দলীয় সূত্রমতে, ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৭ করা হতে পারে। দলে বর্তমানে সাত বিভাগে সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ রয়েছে। ইতিমধ্যে ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা করা হয়েছে। ফরিদপুর ও কুমিল্লা নতুন তিনটি বিভাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ফলে সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের স্থলে তিনটি নতুন পদ বৃদ্ধি করে ১০ করা হতে পারে এবারের কাউন্সিলে। এর বাইরে নতুন করে তথ্য ও প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারসহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। এ ছাড়া প্রচার ও প্রকাশনা, শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি ও সমবায়সহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ ভেঙে এর সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। ধর্মীয় ও সংখ্যালঘুদের জন্য নতুন পদ অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এ নিয়ে এখন ভিতরে ভিতরে কাজ শুরু করেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

সর্বশেষ খবর