শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাজেটের পর আরও ধস নেমেছে শেয়ারবাজারে

ফের হতাশায় বিনিয়োগকারীরা

আলী রিয়াজ

জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। গত কয়েক মাসে দেশের শেয়ারবাজার এমনিতেই তলানিতে ছিল। প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর আরও ধস নেমেছে শেয়ারবাজারে। বাজেটের পর ধারাবাহিকভাবেই কমেছে সূচক। গত কয়েক দিনে লেনদেনও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এই কয়েক দিনে প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। এতে ব্যাপকভাবে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা ও শিল্পে বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে যেসব কোম্পানির প্রাথমিক শেয়ার আসছে, সেগুলোর খুবই ছোট মূলধনি। কিছু জাঙ্ক শেয়ারও আপলোড হচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পারে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। বড় কোম্পানি, বিশেষ করে বিদেশি প্রতিষ্ঠান, টেলিকম খাত বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার আসছে না। বাজেটে যদি কিছু কর সুবিধা দিয়ে এসব কোম্পানি আনা যেত, তাহলে হয় তো পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াত। তিনি বলেন, বাজেটে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ নিয়ে সুনির্দিষ্ট সুবিধা দেওয়া হলেও অনেকের আস্থা আসত। এ ছাড়া শেয়ার মুনাফার ওপর ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আস্থা ফিরতে পারত। জানা গেছে, প্রতি বছর বাজেটকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। বাজেটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ওপর বিভিন্ন প্রণোদনা থাকায় এর ইতিবাচক প্রভাবও দেখা যায়। চলতি বছরও নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সরকারের অনেক নীতিনির্ধারক বিভিন্ন সময় আভাস দিয়েছেন, শিগগিরই বাজার গতিশীল হবে। বাজেটের আগে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ একাধিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে শেয়ারবাজার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন। এসব সংবাদে বাজেটের পর বাজার গতিশীল হওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। ডিএসই ও এসইসিকে বাজেট নীতিসহায়তা হিসেবে ট্যাক্স অব্যাহতি দিলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো প্রণোদনা বা লভ্যাংশের কর কমানোর দাবি প্রতিফলিত হয়নি। এর ফলে প্রতিদিনই কমছে সূচক ও লেনদেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ২ জুন বাজেট ঘোষণার পর ৫ জুন প্রথম লেনদেন হয় শেয়ারবাজারে। ওই দিন বাজারে লেনদেন হয় ৩০৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ১৮৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা কম। শতাংশ হিসেবে যা মোট লেনদেনের প্রায় ৬০ ভাগ। এই এক সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ২১ শতাংশ। গত সপ্তাহে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, চলতি সপ্তাহে তা কমে মোট লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১০০ কোটি টাকা লেনদেন কমেছে। এ সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর কমেছে ২১৯টির, বেড়েছে ৭৯টির। অন্যদিকে আগের সপ্তাহে দর বেড়েছে ১৭০টি কোম্পানির শেয়ারের। শীর্ষ ৩০ কোম্পানির বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দরও কমেছে। জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ব্যাংকিং খাতের অবদান প্রায় ৪০ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতি এ খাতের। প্রায় সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দরই ১০ টাকার কাছাকাছি। অনেকগুলো এরও নিচে। ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতার প্রভাবে শেয়ারবাজারে এমন পরিস্থিতি। অন্যদিকে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বৃহৎ বিনিয়োগ পরিস্থিতিও নেতিবাচক। ফলে বাজারে বিনিয়োগ করতে অনেকে সাহস পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউসের পরিস্থিতিও খারাপ। এ অবস্থার উন্নতি কবে হবে তা মনে হচ্ছে কেউ জানে না। তবে জুলাইয়ের পর কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে আমার ধারণা।’

সর্বশেষ খবর