শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ

খালেদার নিরাপত্তা প্রধানসহ তিনজনকে অব্যাহতি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী লে. কর্নেল মজিদ (অব.)সহ তিন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে ‘অব্যাহতি’ দেওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে নানা মুখরোচক আলোচনা চলছে। এ সংবাদের কেউ সত্যতা স্বীকার না করলেও ২ জুন থেকে ওই তিন কর্মকর্তা বিএনপি প্রধানের নিরাপত্তার দায়িত্বে নেই বলেও দলীয় নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

অন্য দুই কর্মকর্তা হলেন— মেজর ওয়াজেদ (অব.) এবং মেজর    মোহাম্মদ আনোয়ার (অব.) । তাদের বিরুদ্ধে চেইন অব কমান্ড ভঙ্গের পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর আজিজ রানা (অব.)কে কর্নেল মজিদের স্থানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে গতকাল বিকালে কর্নেল মজিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তিনি অসুস্থ। গুলশান কার্যালয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে বুকসহ বেশ কয়েকস্থানে ব্যথা পান। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অব্যাহতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এ ধরনের কোনো কিছু জানি না। সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর (অব.)। দায়িত্বে তিনি দীর্ঘদিন কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন কর্নেল মজিদ। সেখানে তিনি বিশাল বলয়ও তৈরি করেন। এ কারণে গুলশান কার্যালয়ে যাতায়াত কমিয়ে দিয়েছেন ফজলে এলাহী আকবর। তবে তিন কর্মকর্তার অব্যাহতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফজলে এলাহী আকবর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ফজলে এলাহী নিয়মিত না হওয়ার পর বেগম জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ দেখা যায়। সাতজন কর্মকর্তার মধ্যে কর্নেল মজিদ, ওয়াজেদ আর আনোয়ার একপক্ষে অবস্থান নেন। অন্যপক্ষে রয়েছেন আজিজ রানা, মেজর সাফায়াত উল্লাহ (অব.), মেজর মইনুল হোসেন (অব.) ও লেফটেন্যান্ট সামিউল (অব.)। এ ছাড়া ১৬ জন সিএসএফ সদস্যকেও তারা যার যার গ্রুপে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসনের কানেও যায়। এতে ক্ষুব্ধ হন তিনি। এরপরই ওই তিনজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গুলশান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কর্নেল মজিদ এতটাই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন যে, তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাকে ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অচল’ এমনটাই মনে করতেন। লক্ষ্মীপুরে দলীয় এক কর্মীকে হত্যা মামলার আসামি হয়েও তিনি স্বদর্পে বিএনপি চেয়ারপারসের প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলেও কেউ ভয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি। জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে বিএনপির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এমপি নির্বাচন করার জন্য আলাদা একটি বলয় তৈরি করেছেন মজিদ। পোস্টার, ব্যানার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে রাজনৈতিক নেতার মতো তুলে ধরেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রভাবশালী এক উপদেষ্টার মদদে গুলশান কার্যালয়ে তিনি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকদিন ধরে ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মেজর ওয়াজেদ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ২ জুন থেকে মৌখিক ছুটিতে গেছেন মেজর আনোয়ার। তবে কর্নেল মজিদ কাকে বলে গেছেন কেউ জানেন না। মেজর আনোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তিনি তার মা ও নিজের অসুস্থতার জন্য ছুটি নিয়েছেন। সুস্থ হলেই কাজে যোগ দেবেন। অন্যদিকে মেজর ওয়াজেদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে বর্তমান চেয়ারপারসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা আজিজ রানা বলেন, ‘মেজর ওয়াজেদ বেশ কয়েকদিন ধরে ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটিতে গেছেন। মেজর আনোয়ারও এক সপ্তাহের ছুটিতে গেছেন। তবে কর্নেল মজিদ সম্পর্কে কিছু জানি না।’

সর্বশেষ খবর