রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্লু নেই, ক্ষোভ প্রতিবাদ

এস এ আসাদ, পাবনা

পাবনার হেমায়েতপুরে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ সেবাশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মবর্ণনির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গতকাল তাদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল ছিল শহর। জানা গেছে, গত শুক্রবারের এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই রাতে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর ঘোষ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের নামে পাবনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে গতকাল পর্যন্তও পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ধরতে পারেনি। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। পাবনা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, জয় কালীবাড়ি মন্দির, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ, পূজা উদ্যাপন পরিষদ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সাংস্কৃতিক জোটসহ অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিকাল সাড়ে ৪টায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের সামনে এসব সংগঠন বিশাল মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ ধর্মবর্ণনির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন যুবলীগ সভাপতি শরিফ উদ্দিন প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন কুমার ঠাকুর, প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন, যুগল কুমার ঘোষ, বাদল ঘোষ, সংগীতশিল্পী প্রলয় চাকী প্রমুখ। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে যারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর চেষ্টা করছে তাদের দ্বারাই নৃশংস হামলার শিকার হয়েছেন নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে। বক্তারা অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। সেই সঙ্গে তারা সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান।

সেবাশ্রম এলাকায় আতঙ্ক : এ হত্যাকাণ্ডের পর হেমায়েতপুর সেবাশ্রম এলাকায় গভীর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাটে লোক চলাচল কমে গেছে। সেবাশ্রমের কর্মীরা রয়েছেন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে। সেবাশ্রমের সহ-সাধারণ সম্পাদক ডা. হরে কৃষ্ণ বসু বলেন, নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে হত্যার পর সারা দিন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন লোক থাকলেও সন্ধ্যার পর শুরু হয় সুনসান নীরবতা। আশ্রমে বসবাসকারীরা জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। বাইরে গেলেও কয়েকজন মিলে গ্রুপ করে বের হচ্ছেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে পড়েছে আশ্রম কর্তৃপক্ষ। আশ্রম পরিচালনা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন তারা। সেবায়েত জ্যোতিন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে হত্যার পর টিনের ঘরে যারা বসবাস করেন, তারা কেউই রাতে সেখানে ঘুমাননি। সবাই বিল্ডিংয়ে গিয়ে রাতযাপন করেছেন। হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সেবাশ্রমের ঋত্বিক প্রদীপ চৌধুরী বলেন, ‘ঠাকুর আমাদের শিখিয়ে গেছেন, এই আশ্রম সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত। সব হিংসা-প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে। তাহলে কেন আমাদের ওপর এ হামলা? ধর্মবর্ণ তেমন কিছু বুঝি না। আমরা মানবধর্মকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’

নিত্যরঞ্জন পাণ্ডের নাতি নির্বাক : হত্যাকাণ্ডের পর থেকে নির্বাক রয়েছে নিত্যরঞ্জন পাণ্ডের নাতি। সে কারও সঙ্গে কথা বলছে না। একইভাবে চুপচাপ আছে নিত্যরঞ্জনের মেয়ের একমাত্র ছেলে হৃদয় বাগচী। সে নানার সঙ্গে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় পাবনার এ আশ্রমে আসে। বর্তমানে পাবনা শহরের রাধানগর মজুমদার একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সে।

কেউ গ্রেফতার হয়নি : পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, ‘এ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ মানুষ যেন এ ঘটনার জন্য হয়রানির শিকার না হয় তা মাথায় রেখেই আমাদের অভিযান চলছে।’ এ ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আইএসের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যেই এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে।’

নিত্যরঞ্জন পাণ্ডের মরদেহ গোপালগঞ্জে সমাহিত : পাবনায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মন্দিরের সেবাইত নিত্যরঞ্জন পাণ্ডের মরদেহ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আড়ুয়াকংশুর গ্রামে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় সমাহিত করা হয়েছে। এ সময় গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম রেজা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

গত শুক্রবার গভীর রাতে নিহতের লাশ পাবনা থেকে তার গ্রামের বাড়ি আড়ুয়াকংশুরে নিয়ে আসা হয়। এ সময় নিহতের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকাবাসী নিহতের লাশ একনজর দেখার জন্য ভিড় জমান। নিহতের স্বজনদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও হত্যা ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর