রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

যাবে কোথায় গুপ্তহত্যাকারীদের খুঁজে বের করবই

--------প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গুপ্তহত্যার জন্য আবারও বিএনপিকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে হচ্ছে, প্রত্যেকটার মদদদাতা তারা। গুপ্তহত্যা বন্ধে যা যা করা দরকার সরকার তাই করবে। তিনি বলেন, এসব হত্যা কারা করাচ্ছে, এর পেছনে কারা অর্থ দিচ্ছে, কারা উৎসাহ দিচ্ছে— এদের খুঁজে আমরা বের করব। ছোট এই দেশে ওরা যাবে কোথায়? কেউ পার পাবে না।

গতকাল দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত উপ-কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্প্রতি গুপ্তহত্যার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। এর জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, খুন করার অভ্যাস তার আছে। তারা আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে। ২০০৪ সালে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সরকারের মদদ না থাকলে, তার নিজের মদদ না থাকলে, তার ছেলের মদদ না থাকলে, এ ধরনের হামলা হয় কীভাবে? তিনি বলেন, যে গ্রেনেড যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করা হয়, সেদিন প্রকাশ্য দিবালোকে সে গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকা শহরের রাজপথে। গুপ্তহত্যার পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর ষড়যন্ত্রও কাজ করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যাদের মন্ত্রী বানিয়েছিল, তাদের কেউ কেউ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলছে। খালেদা জিয়া এই ব্যথা কীভাবে ভুলবে! সে কি এর প্রতিশোধ নেবে না, সে প্রতিশোধ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ-প্রধান বলেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বিএনপি গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপির রাজনীতি লুটপাট ও দুর্নীতির রাজনীতি। মানুষ হত্যা করা তাদের রাজনীতি। জনগণকে সম্পৃক্ত করে নয়, বরং জনগণকে হত্যা করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল বিএনপি। তা করতে পারেনি, এখন গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। শেখ হাসিনা জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কারা গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করুন। ওদেরকে চেনা খুব কঠিন না। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষকে কেউ যখন আঘাত করবে তখন কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন না। আপনারা এক জোট হয়ে প্রতিরোধ করবেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকব এবং আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনাদের সঙ্গে থাকবে। যখন তারা হত্যা করে পালানোর চেষ্টা করবে তখন রাস্তার মানুষ তাদেরকে ধরবেন এবং প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন। যেভাবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিরোধ করেছিলেন ঠিক সেইভাবে এদের প্রতিরোধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যদি বিএনপির প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা মোকাবিলা করতে পারে তাহলে গুপ্তহত্যাও আমরা বন্ধ করতে পারব ইনশাল্লাহ। সময়ের ব্যাপার মাত্র। যারা এসব ঘটাচ্ছে, ইন্ধন দিচ্ছে তার কিছু কিছু সূত্র আমরা পাচ্ছি। সব এক সময় বের হবেই। দেশি-বিদেশি যারাই এর পেছনে থাক, বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। যারা উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। এই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলবে না। কেউ রেহাই পাবে না, ক্ষমা পাবে না। খুঁজে খুঁজে বের করা হবে। সভার শুরুতে (গতকাল) শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় নেতা-কর্মীর পক্ষে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। শেখ হাসিনা ৪১ মিনিটের সূচনা বক্তব্যে সাম্প্রতিক রাজনীতি, তার সরকারের উন্নয়ন ও ওয়ান-ইলেভেনের সময় নিজের কারাবন্দী জীবনযাপন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। পরে তার সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের সিনিয়র নেতা এবং সম্মেলন প্রস্তুতি উপ-কমিটিগুলোর প্রধানগণ তাদের রিপোর্ট পেশ করেন। গুপ্তহত্যায় জড়িতদের হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে পুলিশের পরিবারের ওপর আঘাত করা হয়েছে। যারা এটা করে, তারা ভুলে যায় কেন যে তাদেরও পরিবার আছে। তাদেরও বাবা-মা আছে, ভাই-বোন আছে, ছেলে-মেয়ে আছে। আঘাত দিলে প্রতিঘাত কিন্তু পেতেই হবে। তারা কি তাদের পরিবারকে এভাবে বিপদে ফেলতে চায়? জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে যেন সন্তানরা জড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য অভিভাবকদের সজাগ থাকার আহ্বানও জানান তিনি। ইসলামের নামে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্ম তো কাউকে খুন করতে বলেনি। অহেতুক নিরীহ মানুষগুলোকে খুন করা, এটা কোন ধরনের ধর্ম পালন? আল্লাহ বলেছেন, তিনিই বিচার করবেন। যেখানে আল্লাহ বলেছেন তিনি বিচার করবেন, সেখানে সেই বিচারের ভার যখন বান্দা নিয়ে নেয়, তখন তো সে আল্লাহকেও মানে না, রসুলকেও মানে না। সে ইসলাম ধর্মই মানে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম পালন করছে। কিন্তু বেছে বেছে মসজিদের ইমাম, গির্জার ফাদার, মন্দিরের পুরোহিতসহ বিশেষ ব্যক্তিদের হত্যা করে কী মেসেজ দিতে চায় তারা? যেন আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আলোর পথে যাত্রা করেছি। ঘরে ঘরে বিদু্যুৎ দিচ্ছি। মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছি, তখন বিএনপি নেত্রী বাধা দিতে চায়। তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। আমরা বিশাল বাজেট দিয়েছি, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের মিথ্যা অপবাদ দিতে চেয়েছিল, আমরা চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ করছি। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ। বিশ্বের রোল মডেল। এখন সেই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার জন্য গুপ্তহত্যাসহ নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শান্তিপূর্ণ দেশ। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। যারা প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমাকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচন করবেন। আপনাকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে। আমি তাদের বার বার একটা কথাই বলেছি, আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। নিজেও প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। তোমরা কিসের প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেবে? একটি বাড়ি-গাড়ি তাই? এগুলো আমার দরকার নাই, নির্বাচন দাও, জনগণ চাইলে আমি প্রধানমন্ত্রী হব, না চাইলে নয়। তিনি বলেন, তারপর নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়েছিল এবং ২০১৪ সালের শত বাধা পেরিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করায় আমরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারছি। যত বাধাই আসুক, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোলে তা একদিন অর্জন হয়।

সর্বশেষ খবর