জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, তিনি মনে করেন এই সময়ে ১৪ দলের অভ্যন্তরে কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি করা উচিত নয়। তিনি বলেন, এটা ইতিহাসচর্চার সময় নয়। এটা জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার সময়, জনগণের নিরাপত্তা বিধান করার সময়। তিনি বলেন, জাসদ নিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য ‘অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ও অপ্রাসঙ্গিক’। গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। গত সোমবার ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদকে দায়ী করেন। এ ঘটনার দুই দিন পর গতকাল সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ নেতা ইনু। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, জাসদ নিয়ে বা যে কোনো দল নিয়ে যে মন্তব্য, বক্তব্য ও বিবৃতি আসছে তা অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ও অপ্রাসঙ্গিক। তিনি অবশ্য বলেছেন, সৈয়দ আশরাফের মন্তব্যে ১৪ দলের ঐক্যে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেই তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, জাসদ ও আওয়ামী লীগের ঐক্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বার বারই বলেছি যে গভীর বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সুতরাং এ ধরনের মন্তব্যে এ ঐক্য ও চলার পথ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ ‘ঐক্য ইতিমধ্যে দেশের জন্য মঙ্গলজনক’ প্রমাণিত হয়েছে। এ মুহূর্তে কোনো উসকানিতে পা দেবেন না, উত্তেজিত হবেন না, ধৈর্য রাখুন, ঐক্য রাখুন। তাই দেশকে নিরাপত্তা দেবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, মনে রাখতে হবে, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের প্রতিটি ঘটনা এখনো ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করা আছে, ইতিহাস ইতিহাসের মতোই বিশ্লেষণ করবে। বঙ্গবন্ধুর সমর্থনে যে তলপিবাহক-তোষামোদকারী গোষ্ঠী ছিল তারা বা প্রকাশ্য বিরোধিতাকারী জাসদ— কার কতটুকু ভুল, বা কে কতটুকু ক্ষতি করেছে, বা ক্ষতি করেনি— তার মূল্যায়নটা ইতিহাসই করবে। জাসদ সভাপতি বলেন, জঙ্গিরা যেভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে, সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। সাধারণ মানুষ এবং দেশের নিরাপত্তা বিধানের জন্য দরকার ‘সর্বাত্মক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা’। আর সেজন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল-মহাজোট ‘একসঙ্গে’ কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, খোদ শেখ হাসিনা বার বার বলেছেন, প্রতিক্রিয়াশীল, দেশবিরোধী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক নিহত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর হত্যার জন্য কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে দায়ী করাটা ইতিহাসসম্মত কোনো বক্তব্য নয়। হাসানুল হক ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদের ঐক্য হয়েছে। আমরা মনে করি, পঁচাত্তরের বিয়োগান্ত ঘটনার পূর্বাপর সব ঘটনার গভীর বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগ, জাসদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঐক্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা জাসদও সেই ঐক্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ‘সাম্প্রদায়িকতা ও সামরিক শাসনের জঞ্জাল থেকে’ উদ্ধার করে অসাম্প্রদায়িকতার পথে, গণতান্ত্রিকতার পথে, সংবিধানের পথে পরিচালিত করা সম্ভব হচ্ছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, ওগুলো আমাদের মাথাব্যথা নয়। কে মন্ত্রী হবেন আর কে মন্ত্রী হবেন না— সে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নিয়ে থাকেন। আমার মনে হয় তার এ এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। তিনি বলেন, দেশরক্ষা করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আর আমরা সেই ঐক্যের নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি জাসদ শতভাগ আন্তরিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল।