শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

অবকাঠামো ছাড়াই শুরু হলো ট্রানজিট

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

অবকাঠামো ছাড়াই শুরু হলো ট্রানজিট

ট্রানজিটের উদ্দেশে আশুগঞ্জে নোঙর করেছে দুই দেশের পতাকাবাহী ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল অন এনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি) চুক্তির আওতায় ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান আশুগঞ্জ নৌবন্দরের জেটিতে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

২০০৪ সালে আশুগঞ্জকে নদী বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হলেও বন্দরের তেমন কোনো অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়নি।  খানাখন্দে সড়ক বেহাল। দীর্ঘ একযুগে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে একটি আরসিসি জেটি, একটি স্টিল জেটি, একটি ওয়ার হাউস, একটি অফিস ভবন ও বন্দর থেকে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ভাঙাচোরা ঘাট, নেই নিজস্ব লোকবল। ভৈরব নদী বন্দরের জনবল দিয়ে বন্দরের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এদিকে, এই বন্দর  দিয়ে বিনা মাশুলে ভারতের পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ, কেমিক্যাল পদার্থ ও খাদ্য পণ্য চাল ত্রিপুরা রাজ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট করা হয়েছে। এবারই প্রথম মাশুল দিয়ে ১০ হাজার টন স্টিল সিট ও রড আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। ১৯৭২ সালের নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নৌ-বাণিজ্য প্রটোকলের অধীনে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত চুক্তির অংশ হিসেবে এই পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। প্রতিটন পণ্য পরিবহনে মাশুল ধরা হয়েছে ১৯২ টাকা। বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) এ কেএম আরিফ উদ্দিন জানান, দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনবল সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এ বন্দরকে একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক নৌবন্দরে পরিণত করা হবে। বাংলাদেশ-ভারত নৌপ্রটোকল চুক্তির আওতায় ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান ও আশুগঞ্জ নৌবন্দরের উন্নয়নে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যার সিংহ ভাগ ভারতের ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা। এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল তিনটি আন্তর্জাতিক মানের কন্টেইনার টার্মিনাল জেটি, কাস্টমস অফিস, বিআইডব্লিউটিএ অফিস, স্থলবন্দরের অফিস, ক্রেন ইয়ার্ড, ওয়্যার হাউস, ইলেক্ট্রিক সাবস্টেশন, ট্রাক ইয়ার্ড, রেস্ট হাউসসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ। এ প্রকল্পের জন্য ২৮.৬৭ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু ৬ বছরেও এই প্রকল্পের কোনো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিএনপি মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ক্ষমতায় যেতে খালেদা জিয়া ইবলিশের সঙ্গেও হাত মেলাতে প্রস্তুত। খালেদা জিয়া বলেছেন তিনি নাকি খুনের রাজনীতি বিশ্বাস করেন না, এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। বিএনপি-জামায়াত  দেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। আর খালেদা জিয়া এসব হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। তাই আমাদের সাবধান থাকতে হবে। তিনি বলেন, নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় ট্রানজিটে বাংলাদেশ লাভবান হবে। বিপুল রাজস্ব পাবে সরকার। এখন যে শুল্ক ১৯২ টাকা, সেটি হয়তো এক সময় আটশ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ট্রানজিটের ফলে বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পাশাপাশি ট্রাক মালিক-শ্রমিক এবং জাহাজ মালিকরাও লাভবান হবেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল  মোকতাদির চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বক্তব্য রাখেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। আলোচনা শেষে নৌবন্দরের ফেরিঘাটে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ফিতা কেটে ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর আগে বুধবার বিকালে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতীয় ১ হাজার ৪  মেট্রিক টন লৌহজাত পণ্যবাহী এমভি নিউটেক-৬ জাহাজ আশুগঞ্জ নৌবন্দরে নোঙর করে। প্রথমবারের মতো শুল্ক দেওয়ার মাধ্যমে এ জাহাজের পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পণ্য সাত রাজ্যে যাবে।

ভারতীয় হাইকমিশনের বক্তব্য : ভারতীয় হাইকমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ নৌপথে বাণিজ্য ও ট্রানজিট বিষয়ক প্রটোকলের অধীনে বুধবার প্রথমবারের মতো ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ আশুগঞ্জ বন্দরে পৌঁছায়। বাংলাদেশ ও ভারত পণ্য পরিবহনে ফি নির্ধারণে সম্মত হওয়ার পর এই জাহাজ আশুগঞ্জে এলো। স্টিল রড বহনকারী জাহাজের মালামালগুলো আশুগঞ্জে খালাসের পর সড়কপথে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা নিয়ে যাওয়া হবে। এ উপলক্ষে গতকাল দুপুরে আশুগঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নৌ পরিবহন মন্ত্রী, অর্থ উপদেষ্টা, বিআইডব্লিউটিএ ও এনবিআরের চেয়ারম্যান, ভারতের হাইকমিশনার ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বছর জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথ সম্মতিতে নেওয়া সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবেই এই পণ্য পরিবহন হচ্ছে। গত নভেম্বরে দিল্লিতে দুই দেশের নৌ সচিবদের বৈঠকে পণ্য পরিবহনের ফি নির্ধারিত হয়েছিল। ভারতের পক্ষ থেকে আশুগঞ্জের অবকাঠামো উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ঋণ চুক্তির অধীনে কন্টেইনার, বাল্ক ও কার্গো ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নদী বন্দর এবং ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক ৪ লেনে রূপান্তরের কাজ চলছে। এছাড়া আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি অর্থ বরাদ্দ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার জন্য এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে ভারতের উত্তর ও পূর্ব অংশের মধ্যে দূরত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। বর্তমানে দিল্লি বা অন্যান্য অংশ থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রথমে সিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে আসাম এবং তারপর সেখান থেকে ত্রিপুরাসহ অন্যান্য অংশ নিতে হয়।

সর্বশেষ খবর