শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইউপি নির্বাচন সব থেকে খারাপ হয়েছে

ইউপি নির্বাচন সব থেকে খারাপ হয়েছে

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অতীতের সব নির্বাচনের চেয়ে খারাপ হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থায় এ ধরনের ভীতিকর নির্বাচন অতীতে হয়নি। এই নির্বাচনে সরকারি দল সাময়িকভাবে লাভবান হলেও নির্বাচন পদ্ধতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একদিন জনগণের কাছে এর জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার। এ সময় সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সদস্য মো. জাহাঙ্গীর, প্রকৌশলী মুজবা আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য। নির্বাচনে ভোট কারচুপি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। আমরা গণতন্ত্রের উল্টোপথে চলছি। ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের নাম-নিশানা থাকবে কিনা সন্দেহ আছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার বলেন, দলভিত্তিক নির্বাচনের কারণে এবারের নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও অনিয়ম হয়েছে। এ নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তি গুরুত্ব পেয়েছে। বড় বড় রাজনৈতিক দল তথা মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি এবং প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নিজ দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এবারের ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সংঘর্ষে ১৪৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সাড়ে ১১ হাজারের বেশি লোক আহত হয়েছে। এ নির্বাচনে ২১৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র আর অবশিষ্ট ২১২ জনই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত। ভয়ভীতি দেখানোর কারণে বিএনপি-আওয়ামী লীগের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। নির্বাচনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর হামলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতার কারণেই ভোট কেন্দ্রে প্রতিপক্ষ এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের প্রবণতা দেখা  গেছে। কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। ভোট কেন্দ্রে প্রকাশ্যে অনিয়ম চলেছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক ভূমিকা দেখা যায়নি। ব্যাপক সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে এবারের নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়নি। এ সংকট থেকে উত্তরণে সুজন কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে— স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, জাতীয় বাজেটের একটি অংশ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নামে বরাদ্দ করা। রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চা করা। তাদের মতে, কালবিলম্ব না করে জাতীয় স্বার্থে এই নির্বাচনের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা। সংলাপে সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দল, সরকারের নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ, নাগরিক সংগঠন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এবার ইউনিয়ন পরিষদে ছয় ধাপে নির্বাচন হয়েছে মোট ৪১০৪টি। ফল ঘোষণা হয়েছে ৪০০০টি ইউনিয়নের। স্থগিত আছে ১০৪টি ফলাফল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬৬৭টি, বিএনপি ৩৬৭টি, জাতীয় পার্টি (জাপা) ৫৭টি, জাসদ ৮টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ৫টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৮৮৮টি ইউনিয়নে জিতেছেন। এ নির্বাচনে ২৯ জন নারী নির্বাচিত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর