শনিবার, ১৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
নয়া দিল্লির চিঠি

ভারত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে

রামকৃষ্ণ মিশনকে হুমকি

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

রামকৃষ্ণ মিশনে নাশকতা চালানোর হুমকিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল কথা বলেছেন বিষয়টি নিয়ে। পাশাপাশি বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের জনসংযোগের ভারপ্রাপ্ত স্বামী শুভকরানন্দ গতকাল দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব ভাস্কর ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার, সাউথ ব্লকে বাংলাদেশ বিষয়ক যুগ্ম-সচিব পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ রেখে চলছেন। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ঘটনার অনুসন্ধান করছে নয়াদিল্লিও। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন, ‘হুমকির চিঠি আসার পর আমাদের হাইকমিশন রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে। বাংলাদেশ পুলিশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও সতর্ক করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সকালে হাইকমিশনের এক উচ্চপদস্থ কর্তা রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে এসেছেন।’ রাতে শ্রিংলা নিজে গেছেন মিশনে। রামকৃষ্ণ মিশনের সহ-সম্পাদক স্বামী সেবানন্দকে খুনের হুমকি দেওয়া কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই মনে করছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট নকশা পাওয়া যাচ্ছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা  গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, আইএস-জঙ্গি জামায়াত-তালেবানদের যে মঞ্চ তৈরি হয়েছে, তারা চাইছে কৌশলগতভাবে বিজেপি তথা আরএসএস-কে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডগুলোর মাধ্যমে তাতাতে। আসল উদ্দেশ্য রাজনৈতিকভাবে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপ তৈরি করা। অর্থাৎ এ বার্তাই বারবার ভারতের কাছে পৌঁছানো যে এ দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। ত্রাস ও ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। হাসিনা যা দূর করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই সরকার ভেঙে দিয়ে নতুন করে সরকার গড়তে এবং বিএনপি-জামায়াত জোটকে মান্যতা দিতে যাতে বাধ্য হয় নয়াদিল্লি, এটা তেমন একটি চাপেরই কৌশল।

পাশাপাশি এটাও ভাবা হচ্ছে যে এটা জঙ্গি মনোবল ফিরিয়ে আনার নৃশংস কৌশল। ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা যেভাবে জঙ্গি দমনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তাতে স্বাভাবিকভাবে মনোবলে চিড় ধরেছে জঙ্গি জামায়াত অংশের। বিশেষ করে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার সময় হাসিনা সরকার কঠোর অভিযান চালিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার ব্যাখ্যায়, ‘সর্বত্রই যখন নাশকতার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে শাসনযন্ত্র, তখন নিছক মনোবল চাঙা রাখার জন্য পাল্টা চোরাগোপ্তা হামলা, হুমকির মতো বিষয়গুলো চালানো হয়। কাশ্মীর বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গিদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের দৃষ্টান্ত দেখা যায়।’

মোদি-মমতার উদ্বেগ : কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, স্বামী সেবানন্দকে চিঠি পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদির দফতর থেকে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোদির উদ্বেগের কথা জানিয়ে সেখানকার পুরোহিত-সেবায়েতদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর