রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঝিনাইদহে পুরোহিত হত্যা

পুলিশ ১১ দিনেও ক্লু বের করতে পারেনি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার করাতিপাড়া গ্রামের পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি হত্যার ১১ দিন পার হলেও এ ব্যাপারে কোনো ক্লু বের করতে বা কোনো আসামি ধরতে পারেনি পুলিশ। এতে পুরোহিতদের মাঝে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।   এর আগে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ দাবি করেছিলেন, ‘পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ তার এ বক্তব্যে নিহতের পরিবার আশার আলো দেখেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই কথার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এ হত্যাকাণ্ডের পরদিন ভারতীর দূতাবাসের দুই কূটনীতিক ‘হত্যার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন’ বলে নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও নানা আশ্বাস দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন নিহত পুরোহিতের বাড়িতে গিয়ে খুনিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনার কথা জানিয়ে আসেন। কিন্তু তারপরও এখন পর্যন্ত হত্যাকারীদের ব্যাপারে কোনো ক্লু উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কারণে জেলার পুরোহিতদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক পুরোহিত বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। এরই মধ্যে কালীগঞ্জের রাধা গোপীনাথ মন্দিরের পুরোহিত সেবানন্দ দাসকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দিয়েছে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। হুমকি পাওয়ার পর মন্দির ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন ওই পুরোহিত। মন্দিরের সেবক পূর্ণিমা বারই জানান, পুরোহিতরা নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পুলিশের নিরাপত্তার আশ্বাসের পরও তারা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। নিহত পুরোহিতের বড় ছেলে ও মামলার বাদী অরুন কুমার গাঙ্গুলি বলেন, ‘প্রশাসন ও  সরকারের মন্ত্রীরা আশ্বস্ত করার পর আমরা হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে খুনিরা গ্রেফতার না হওয়ায় আমরা হতাশা বোধ করছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।’ ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের পুরোহিত বিনয় কুমার মল্লিক বলেন, ‘আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলি হত্যার ঘটনায় আমিসহ হিন্দু সমাজ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। পুরোহিতরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তারা পূজা-অর্চনা করেন। তাহলে আমাদের ওপর হামলা কেন?’ মদন মোহন মন্দিরের পুরোহিত মদন গাঙ্গুলি বলেন, ‘পুরোহিত হত্যার পর আতঙ্কের মধ্যে আমাদের দিন কাটছে। মন্দিরের বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘পুরোহিত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা গেছে। তারা কোন পথে এসে এবং হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে কোন পথে পালিয়ে গেছে— এসব তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।’ তিনি আরও জানান, জেলার ৩৬৫টি পূজা মন্দিরে পুলিশের বিশেষ নজরদারি চলছে। পুরোহিতদের চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মন্দির, গির্জা ও উপাসনালয়ের পুরোহিতদের নিরাপত্তার দিকে কড়া নজর রাখছে পুলিশ। পুরোহিতদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ পালাক্রমে ডিউটি করছে। মন্দিরের কর্মকর্তাদের কাছে পুলিশের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যে কোনো সময় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবাদ-বিক্ষোভ : ঝিনাইদহে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলিসহ সারা দেশে স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠী কর্তৃক গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে গতকালও ঝিনাইদহে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ঝিনাইদহ জেলা শাখা এদিন মানববন্ধনের আয়োজন করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় পোস্ট অফিস মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি একরামুল হক লিকু, ঝিনাইদহ সদর পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে প্রতিবাদী বিভিন্ন প্লাকার্ড বহন করা হয়। বক্তারা পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলিসহ সারা দেশে স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠী কর্তৃক গুপ্তহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং এসব হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। 

আরও দুজন গ্রেফতার মোবাইল ফোন উদ্ধার : পীরগঞ্জের পুরোহিত উত্তম কুমার মোহন্ত অপহরণ মামলায় আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হলেন গাইবান্ধা সাদুল্ল্যাপুর উপজেলার উত্তরহাট বাবুনী গ্রামের আবদুল কাইয়ুমের ছেলে শাহীন (২৪) ও নূরুল হকের ছেলে আল আমীন (২৩)।  গতকাল দুপুরে আল আমীনকে নিজ বাড়ি থেকে এবং শাহীনকে রংপুরের কাউনিয়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। শাহীনের কাছ থেকে অপহৃত পুরোহিতের মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তানবিরুল ইসলাম জানান, মামলায় অভিযুক্ত চার অপহরণকারীর মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, পীরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর সর্দারপাড়া আশ্রমের পুরোহিত উত্তম কুমার মোহন্তকে গত ১০ জুন সকালে মুঠোফোনে বিয়ে পড়ানোর কথা বলে গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তার সন্ধান মিলছিল না। তাকে লালমনিরহাট সীমান্তবর্তী এলাকা মোগলহাট ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে আটকে রাখা হয়। এরপর দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ১১ জুন পুলিশ আনোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে পুরোহিতকে উদ্ধার করে এবং আনোয়ারকে গ্রেফতার করে। ওই দিনই পুরোহিতের ছেলে পীরগঞ্জ থানায় আনোয়ার হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা চারজনের নামে অপহরণ মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর