শিরোনাম
রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে রাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে রাষ্ট্র

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল

মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেছেন, রাষ্ট্র আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। কোনো সমস্যা সমাধান করতে গেলে ছোটখাটো পথ খুঁজছে। অন্যদিকে মানুষ মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে, ফতোয়ার  মাধ্যমে অমানবিক কার্যক্রমকে সমর্থন দিচ্ছে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ’ নামের একটি উদ্যোগের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। সুলতানা কামাল বলেন, সুশাসনের অভাব থাকলে পদে পদে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটতে থাকে। একপর্যায়ে সমাজে হতাশা তৈরি হয়। মানুষ আমাদের বলছে, ক্রসফায়ার হওয়ার পরে আপনারা কথা বলছেন কেন? যাদের ক্রসফায়ারে দেওয়া হচ্ছে, তারা অন্যের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অতএব তাদের মানবাধিকার নেই। এই যে একটা বোধ সমাজে চলে আসে, যেনতেনভাবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে— এটা কোনো আধুনিক, গণতান্ত্রিক, সুশাসনসম্পন্ন রাষ্ট্রের লক্ষণ নয়। টেকসই উন্নয়ন অর্জন এজেন্ডা (এসডিজি) ২০৩০ বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের পাশাপাশি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে এবং এই প্রক্রিয়ার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দেশের নাগরিক সমাজের তত্ত্বাবধানে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ’ নামে নতুন এক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এ সংগঠনের আহ্বায়ক হলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ। নতুন এই প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এসডিজি ২০৩০-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি অভিষ্ট, যা সম্মিলিতভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ব্যাপকতার দিকটি বিবেচনা করলে এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এ প্রক্রিয়ায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের যথাযথ অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সেই বিবেচনায় ওই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করতেই নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে। এ প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও মাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের সচেতন করবে যাতে বিনিয়োগকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হয়। সেই সঙ্গে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং এসডিজি বাস্তবায়নকারী সব প্রতিষ্ঠান ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে তথ্য বিনিময়সহ সার্বিক সমন্বয় সাধনে এ প্ল্যাটফর্ম সহায়তা করবে। নাগরিক সমাজ থেকে আট ব্যক্তিকে নিয়ে এই প্ল্যাটফর্মের ‘কোর গ্রুপ’ করা হয়েছে। ১৩ জনকে নিয়ে করা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।  ‘কোর গ্রুপে’ থাকছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক দুই উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও রাশেদা কে. চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহীন আনাম, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মেট্রোপলিটান চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, মোস্তাক রাজা চৌধুরী, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। উপদেষ্টা পরিষদে থাকছেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ফজলে হাসান আবেদ, জামিলুর রেজা চৌধুরী, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, ড. হামিদা হোসেন, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, মুস্তফা মনোয়ার, রোকেয়া আফজাল রহমান, রাজা দেবাশীষ রায়, শ্রীমতি সাহা, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও শাইখ সিরাজ। এ ছাড়া ২৬টি বেসরকারি সংস্থা এ প্ল্যাটফর্মে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে, যার সচিবালয় হবে সিপিডি। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, ঢাকা আহছ্ানিয়া মিশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ইয়ার অ্যাসোসিয়েশন (বেলা), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কেয়ার বাংলাদেশ, নিজেরা করি, অক্সফাম বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসডিজি যেমন বৈশ্বিকভাবে সার্বজনীন, তেমনি জাতীয়ভাবেও। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করব। পাশাপাশি যেখানে ঘাটতি থাকবে সেখানে আমরা সরকারের সমালোচনা করব।

সর্বশেষ খবর