সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বড় ভাই নয়, বন্ধু হিসেবেই পাশে থাকবে ভারত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বড় ভাই নয়, বন্ধু হিসেবেই পাশে থাকবে ভারত

অভিজিৎ মুখার্জি

বড় ভাইয়ের মতো নয়, বন্ধু হিসেবে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে ও ভারতীয় লোকসভার সদস্য অভিজিৎ মুখার্জি। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকে বাংলাদেশ বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া বাকি। এ জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশ ও ভারতের সম্মিলিত শক্তি। এই সম্মিলিত শক্তি গঠন সম্ভব হলে এশিয়ার এ অঞ্চলের আধিপত্য নতুন কোনো শক্তি বা চীনের হাতে নয়, থাকবে আমাদের হাতে। তাই বড় ভাই হিসেবে নয়, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুর মতো পাশে থাকতে চায় এবং থাকবে। গতকাল ঢাকার ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সংবর্ধনায় এসব মন্তব্য করেন অভিজিৎ মুখার্জি। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে নানান সময়ে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি গত শুক্রবার চার দিনের সফরে ঢাকা আসেন। অভিজিৎ মুখার্জির মায়ের আদি বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইলে। তাই বিভিন্ন সময়ে তাকে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু এতদিন পেশা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরি নিয়ে ব্যস্ততায় আসা হয়নি বাংলাদেশে। পাঁচ বছর আগে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে পুরোদস্তুর রাজনীতি শুরু করে অভিজিৎ তার বাবার আসন জঙ্গিপুর থেকে নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য হিসেবে। এই নির্বাচনী এলাকাও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের খুব কাছাকাছি। সব মিলিয়েই টান অনুভব করতেন বাংলাদেশের প্রতি। এতদিন মা শুভ্রা মুখার্জির মাধ্যমেই পেতেন বাংলাদেশের আমেজ। গত আগস্টে মা শুভ্রা চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। এর দশ মাসের মাথায় অভিজিৎ এলেন বাংলাদেশ সফরে। ব্যক্তিগত সফর হলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ সফরকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই প্রণবপুত্র সাক্ষাৎ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। আজ ফিরে যাবেন নিজ দেশে। কিন্তু এর আগেই মুগ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশের আতিথেয়তায়। গতকাল বিকালে সেই অনুভূতির কথাই জানালেন অভিজিত। বললেন, এতদিন বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তার কথা শুনেছি। এখন দেখলাম। শুধু বলব, আমি অভিভূত। আমি সারা জীবন আপনাদের পাশে থেকে আমার সাধ্যমতো করার চেষ্টা করব। তিনি বলেন, আপনারা আমার মামার দেশের লোক। আর আমার মা বলতেন, ‘বাংলাদেশের কেউ তোমার কাছে সহযোগিতা চাইলে কখনো গা এড়িয়ে যেও না। তোমার যতটুকু ক্ষমতা ততটুকুই করবে। বেশি করতে পারব না বলে কিছু করবে না, তা কখনই করবে না।’ অভিজিৎ বলেন, মায়ের এ কথা এখন আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ আমার বাবাকে, ভারতকে এবং আমাকে যে সম্মান দিয়েছে তার বিনিময়ে আমার যতটুকু করার আছে আমি চেষ্টা করব। ভিসা সমস্যার সমাধান খুব জরুরি বলে মন্তব্য করা অভিজিত মুখার্জি বলেন, একজন দুজনের জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য সবার ভিসা জটিল করার কোনো সুযোগই নেই। বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করা ও চিকিৎসা প্রয়োজন থাকা— এ দুই ধরনের মানুষের ভিসা জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমান ডিজিটাল পদ্ধতির অপব্যবহার করছে একটি চক্র। প্রতিদিনের যে কোটা থাকে, তা এই চক্র আগেই পূরণ করে ফেলে। ফলে জনসাধারণ পড়ে ভোগান্তিতে। এ কারণে বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তন করে ভিসা সমস্যার সমাধানে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ চলছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ঐক্যের বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী অভিজিত মুখার্জি। জোর দিয়ে বললেন, আজ না হোক কাল ইইউ-এর মতো গ্রেটার সাব কন্টিনেন্ট হবেই। সেখানে থাকবে একই মুদ্রা ব্যবস্থা, একই বাণিজ্য নীতি, তথাকথিত কোনো বাধা থাকবে না এবং থাকবে অভিন্ন পররাষ্ট্র নীতি। অভিজিতের মতে, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী ও উন্নয়নের মাধ্যমেই উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। মানুষের কাছে অর্থ সম্পদ থাকলে তারা আর বিপথে যাবে না। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমিতির সম্মেলন কক্ষে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফর হোসেন পল্টু, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল ফারুক খান (অব.) এমপি, সাবেক সচিব মার্গুব মোর্শেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর