মিডিয়ার খবরে নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ পেলে অবশ্যই বিচার হবে। গতকাল সকালে ঢাকার নিম্ন আদালতে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে আইনজীবী সমিতির সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বিচার বিভাগে কোনো প্রকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়ার অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু অনিয়ম পেয়েছি। কিন্তু এগুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে কিছু বলব না। এর আগে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানার পরিস্থিতি দেখে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি ‘মর্মাহত’ হয়েছি। হাজতখানায় চারজন মহিলা আসামিসহ চারটি শিশু রয়েছে। আমি দায়িত্বপ্রাপ্তদের জিজ্ঞেস করেছি, শিশুগুলো অপরাধী কিনা? এ শিশুরা অপরাধী না হয়েও হাজতখানায় কেন? ওরা আমার দেশের নাগরিক। শুধু কারাগারে বন্দী মায়ের গর্ভে জন্ম বলে ওরাও কারাগারে থাকবে কেন? এ বিষয়টি আমি উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষকে জানাব। এসব শিশু ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি এমনকি রাষ্ট্রপতিও হতে পারে মন্তব্য করে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আমি সুপারিশ করব, হাজতখানার অপরাধীদের সঙ্গে যেন তারাও অপরাধী না হয়ে যায়। তাদের জন্য আলাদা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত। জজকোর্টে আসার বিষয়টি নিজের নিরাপত্তাকর্মীকেও বলেননি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকে সারপ্রাইজ ভিজিটে এসেছি। রাজধানীতে যে কোর্ট থাকবে তা আমরা বাইরে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে দেব। এ কোর্টগুলো দৃষ্টান্ত হবে। এখানে চুল পরিমাণ দুর্নীতির প্রশ্রয় দিতে দেব না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপরাধীরা জামিন পেলে সাক্ষীরা আর নিয়মিত আদালতে আসে না— এমন অভিযোগ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, তারা ভয়ে থাকেন। এমন অভিযোগ থাকলে আসামির জামিন বাতিল করার জন্য বিচারকদের বলেন তিনি। সাক্ষী অনিয়মিত থাকলে আসামির ভোগান্তির প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। সাক্ষীরা দীর্ঘদিন আদালতে না আসায় আসামিরা ভোগান্তিতে পড়েন। মামলার বিচারকাজ দীর্ঘায়িত হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। এর আগে সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাসে গিয়ে ঘণ্টাব্যাপী মামলা পরিচালনা দেখেন তিনি। পরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের কয়েকটি মামলার নথিপত্র যাচাই-বাছাই করেন। এর আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক প্রধান বিচারপতির কাছে সাইবার ট্রাইব্যুনালের এজলাস ভাগাভাগি করে বিচারকাজ পরিচালনা করার কথা জানান। এ সময় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার দিলজার হোসেন, প্রধান বিচারপতির বিশেষ অফিসার সাব্বির ফয়েজ, ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান, মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা, মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান, মুখ্য বিচারিক হাকিম জেসমিন আরাসহ অন্য বিচারকগণ ও আইনজীবীবৃন্দ।