বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

একাত্তরের পর ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

একাত্তরের পর ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে

আওয়ামী লীগের একটি ঐতিহ্য ছিল। ৬৭ বছর ধরে তারা দলকে একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তবে ’৭১ সালের পর আওয়ামী লীগ তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে। গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে। এর পর থেকে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভূমিকা বরাবরই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। স্বৈরাচার শাসনের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থানে দলটি। আওয়ামী লীগ শুধু মুখেই গণতন্ত্রের কথা বলে। বাস্তবে তারা সেই পুরনো বাকশালের অবস্থানেই আছে। একাত্তরের পর জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতারণার ইতিহাস একবার নয়, বারবার। ’৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনে গিয়ে জনগণকে ধোঁকা দেয়। তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে, ভুল বুঝিয়ে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। এখন যে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের অধিকার রক্ষা করবে, তারা সব নিজেদের কব্জায় নিয়েছে। জনগণের অধিকার খর্ব করেছে। পুরো দেশকে তারা কারাগারে পরিণত করেছে। সারা দেশের সব মানুষকে করেছে আসামি। এ দলটির হাতেই বারবার গণতন্ত্র নিহত হয়েছে। স্বাধীনতার পর ’৭২ থেকে ‘৭৫ পর্যন্ত এ দেশে যারাই ভিন্নমত পোষণ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের হত্যা করেছে। তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। তাদের রাজনীতি করতে দেয়নি। এর পরও তারা যখন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি, তখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। কিন্তু এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করে। এগুলো হলো আওয়ামী লীগের ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুনও ছিল এক কালিমালিপ্ত দিন। ওই দিন তৎকালীন একদলীয় বাকশাল সরকার তাদের অনুগত চারটি সংবাদপত্র রেখে অন্য সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদকর্মীকে বেকার করে হতাশার অতল গহ্বরে ঠেলে দিয়েছিল। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কিছুটা সহনশীল থাকলেও ২০০৮ থেকে পরপর দুই মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দলটি বেপরোয়া হয়ে পড়ে। বিগত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের মুখে গণতন্ত্রের কথা বলা বেমানান। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশের কোনো মানুষ ভোট দেয়নি। বিশ্বের কোনো দেশ এদের স্বীকৃতিও দেয়নি। দেশের ৪২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৬টিরও বেশি দল নির্বাচন বর্জন করে। অথচ ঐতিহ্যবাহী সেই আওয়ামী লীগ এখন জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। বিরোধী দলমতের কাউকে রাজনীতি করার সুযোগ দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে কোনো মূল্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকা। রাষ্ট্রের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস, এমনকি দেশের অর্ধেক মানুষকে কারাগারে নিয়ে হলেও তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। দেশে এখন ভিন্ন আঙ্গিকে স্বৈরশাসন চলছে। গণতন্ত্রের মুখোশটাই শুধু রেখে দেওয়া হয়েছে। কাজ হচ্ছে সব একদলীয় শাসনের মতো। তবে আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাদের কোনো রাজনীতি নেই। তাই তারা একটির পর একটি ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করছে। যারা ভিন্নমত পোষণ করছেন, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য কথা বলছেন, তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটডাকাতির দৃশ্য দেশবাসী দেখতে পেয়েছে।

লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি

সর্বশেষ খবর