শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

২০-দলীয় জোট এখন শুধুই ফটোসেশনে

মাহমুদ আজহার

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এখন শুধুই ফটোসেশন-নির্ভর। রমজানে জোটপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পাশে বসে ইফতার করাতেই খুশি নামসর্বস্ব শরিক দলগুলো। গুলশান কার্যালয়েও বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠক আর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশেই সন্তুষ্ট তারা। এর মধ্যে আবার নিবন্ধন নেই বেশ কয়েকটি দলের। নিজস্ব কোনো রাজনীতিও নেই। অধিকাংশই এক নেতার এক দল। এমনও দল আছে যার সভাপতি নেই। আবার সভাপতি থাকলেও নেই সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা মহানগর বিএনপির ওয়ার্ডের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন না এমন নেতারও অভাব নেই ২০ দলে। বিএনপির আলোয় আলোকিত তারা। এ নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সমালোচনার শেষ নেই। তবে হাইকমান্ডের কারণে নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারেন না। এই জোট নিয়ে সরকারবিরোধী ফলপ্রসূ আন্দোলনে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নামসর্বস্ব দল শুধু বিএনপি জোটেই নয়, আওয়ামী লীগ জোটেও আছে। সবাই যে সমান শক্তিশালী হবে এমনও নয়। তবে যাদের নিবন্ধন নেই আমরা তাদের বলেছি, নিবন্ধন করতে। বিএনপির আলোয় আলোকিত— এটা অনেকটাই সত্য। জোট সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনা চলছে। নিবন্ধিত অনেক দলের সঙ্গেই যোগাযোগ হচ্ছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’

২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চার দলের কলেবর বেড়ে ১৮-দলীয় জোট গঠন করা হয়। এই জোটে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট ছাড়া বাকি শরিকরা ছিল— খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ। পরে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল এ জোটে যোগ দিলে তা ২০-দলীয় জোটে পরিণত হয়। ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ডেমোক্রেটিক লীগ। এই দলের সভাপতি ছিলেন ভাষাসৈনিক অলি আহাদ। তার মৃত্যুর পর ওই দলের সভাপতি নেই। সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মণিই এখন সব। দলের নেই নিবন্ধনও। তিনি ছাড়া দলের কেউই পরিচিত মুখ নন।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইদ আহমেদ। তিনিও পার্টির সব। তাদের নেতা-কর্মী চোখে পড়ে না। নামসর্বস্ব দল। অফিসও নামকাওয়াস্তে। এই দলটিও বিএনপি জোটের শরিক। বিএনপি-প্রধানের পাশে বসে বৈঠক করেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারা যখন বৈঠকে বসেন, তখন বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতারাও দ্বিতীয় সারিতে বসতে বাধ্য হন। এ নিয়ে বিএনপির ভিতরে-বাইরে সমালোচনার শেষ নেই। কিন্তু নীতিনির্ধারকদের কারণে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে সাহস পান না। একই অবস্থা এনডিপি, এনপিপি, পিপলস লীগ, লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, মুসলীম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ ন্যাপসহ অধিকাংশ দলেরই। তাদের নিজস্ব কোনো তত্পরতা নেই। বিএনপির আলোয় তারা আলোকিত। তবে জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জোট বিএনপির আলোয় আলোকিত এটা আংশিক সত্য, পুরোটা নয়। কল্যাণ পার্টি ২০০৮ সালে যখন নিবন্ধন নেয়, তখন জোটে ছিল না। নিজের যোগ্যতায় নিবন্ধন নিয়েছে। তবে জোটে অনেক দল আছে যারা এখনো নিবন্ধন নিতে পারেনি। জোটে বর্তমানে কর্মকাণ্ড সীমিত, এটা বাস্তব। এর কারণ হলো প্রধান শরিক বিএনপি ক্ষমতাসীন সরকারের হামলা-মামলায় নিজেদের আত্মরক্ষায় ব্যস্ত।’ জোটের শরিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা অবশ্য অকপটেই স্বীকার করেন, ’২০-দলীয় জোট এখন একটি বিনোদন কেন্দ্র। অনেকটা হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। শরিক দলের নেতারাও রাজনীতির চেয়ে ফটোসেশনকেই গুরুত্ব দেন বেশি। বিএনপি চেয়ারপারসনের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার যোগ্যতাও নেই অনেকেরই। তার পরও সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিযোগিতা থেমে নেই। এ জোট নিয়ে আগামী দিনে আন্দোলন সংগ্রাম কতটুকু সফল হবে, তা চিন্তাভাবনা করা উচিত।’ জানা যায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে ১২টি ছাড়া বাকি দলগুলোর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই। এসব দলের বেশ কটি নামসর্বস্ব। ভাঙন আর দলাদলিতে জড়িয়ে আরও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে কয়েকটি দল। একদিকে ভাঙন, আরেক দিকে নামসর্বস্ব দল গঠনও হচ্ছে। এর সঙ্গে আছে দলাদলি, সন্দেহ, অবিশ্বাস। তার পরও সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে। এরই মধ্যে নানামুখী চাপ ও কিছু প্রাপ্তির লোভে ২০ দল ছেড়েছে ইসলামী ঐক্যজোট, এনপিপি ও ন্যাপ (ভাসানী)। তবে শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বে এনপিপি জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও দলের নেতা ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে একটি অংশ ওই নামেই ২০ দলে থেকে যায়। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, জোটের ‘একটি দলও কমেনি’। একইভাবে আবদুল লতিফ নেজামী ২০ দল ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বে আলাদা কমিটি করে জোটে থেকে যায় একটি অংশ।

 সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, ‘জোটে অনিবন্ধিত নামসর্বস্ব দলগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে। জোটকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নিবন্ধিত দলগুলোকে নিয়ে আসতে হবে। কাগুজে দলের সংখ্যা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।’

সর্বশেষ খবর