শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় শেখ হাসিনা

উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলব আমরা

জঙ্গি নির্মূলে চাইলেন সবার সহযোগিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলব আমরা

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় গতকাল বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সততা, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের মানসিকতা নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সততা সবচেয়ে বড় শক্তি। সততা দিয়েই যে কোনো দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবিলা করা যায়। সততা উঁচু গলায় কথা বলার সাহস জোগায়, সততার এই শক্তি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই শিখেছি। সততার সঙ্গে চলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। পুরো বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, যে সংগঠন বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন, যে সংগঠনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে, সেই আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই কিছু দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে অর্থনীতির মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ কেবল নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব আমরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে বলেই বার বার আঘাত ও ভাঙার চেষ্টা করার পরও কেউ সফল হয়নি। বরং যারা আওয়ামী লীগকে ভাঙার চেষ্টা করেছে তারাই বুঝেছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের শিকড় কত গভীরে। তাই যতবারই আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে, যতবার এই দল ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই আওয়ামী লীগ আরও দৃঢ় উজ্জ্বলতর হয়ে জনগণের সামনে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে, আরও শক্তিশালী হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যে কোনো ক্রান্তিকালে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হয়তো ওপরের নেতারা ভুল করেছেন। কিন্তু তৃণমূলের নেতারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে সংগঠনকে যেভাবে গড়ে তুলতে হবে, নিজের জীবনকেও সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী ‘নিজের সবকিছু ত্যাগ করে’ দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। আলোচনায় অংশ নেন সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, দলের প্রবীণ নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ এমপি ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর জন্য ইফতারের আয়োজন করেন সভাপতি শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শুরুতে নেতা-কর্মীদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিতে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজে স্লোগান দেন, ‘শুভ শুভ শুভ দিন আওয়ামী লীগের জন্মদিন’। প্রতিউত্তরে হলভর্তি নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে স্লোগানে স্লোগানে পুরো মিলনায়তন প্রকম্পিত করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যক্তিজীবন ও সংগঠন গড়ে তুলতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, রোজার মাসে একজন নেত্রী ইফতারের সময় প্রতিদিনই অজস্র মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। অথচ ক্ষমতায় থাকতে দেশের জন্য কিছুই করেননি, বরং নিজেদের বিলাস-ব্যসনে ব্যস্ত ছিলেন।

জঙ্গিবাদ ঠেকাতে সবার সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ঠেকাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম নেওয়ায় বাংলাদেশে আজ শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে, সুরক্ষিত করেছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংসদে এ আলোচনার সূত্রপাত করেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার আশা প্রকাশ করেন। এ কাজে তিনি দেশবাসীর সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস তুলে ধরে সংসদ নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের ৬৭ বছরের ইতিহাস একদিকে সংগ্রামের ইতিহাস, ত্যাগের ইতিহাস। অন্যদিকে দেশ স্বাধীন করার এবং স্বাধীন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। সব সময় আওয়ামী লীগের পাশে থেকে সমর্থন দেওয়ার জন্য তিনি দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, দেশবাসী নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আমাদের সরকার গঠন করতে দিয়েছে বলেই দেশের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ এখন স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। যেটা ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। জাতির পিতার হাতে নেওয়া স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন করতে পেরেছি। আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমার সমস্যাটাও আমরা সমাধান করেছি। একে একে আমরা সমস্যাগুলোর সমাধান করছি। পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে আজকে দেশকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা বাজেটের ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারি নিজস্ব অর্থায়নে। সেইটুকুর সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই। কারণ আমাদের নীতিটাই হচ্ছে জনসেবা। আমাদের নীতিটাই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ করা, আমাদের নীতি জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা। সরকারের গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথাও বলেন তিনি। আমি বিশ্বাস করি, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নত করব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটা উন্নত দেশ।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন : নানা আয়োজনে গতকাল ২৩ জুন সারা দেশে উদযাপন করা হয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সূর্যোদয়ক্ষণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে ধানমন্ডিতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনসহ পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বাংলাদেশ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়াও সারা দেশে আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।  বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ড. আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন খসরু, ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আফজাল হোসেন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ। পরে, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, এর শাখাসমূহ,  বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সর্বশেষ খবর