শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

রিজার্ভ চুরির দায় বৈশ্বিক পদ্ধতির

----------ড. আতিউর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিজার্ভ চুরির দায় বৈশ্বিক পদ্ধতির

রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি যাওয়ার পেছনে বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেনব্যবস্থার ত্রুটিকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের কোনো দায় ছিল না। কোনো প্রশ্ন ছাড়া নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক পেমেন্ট দেওয়ায় তারা দায় এড়াতে পারে না। আন্তর্জাতিক লেনদেন প্রক্রিয়ায় ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এখানে আমাদের কোনো দুর্বলতা ছিল না। সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন পদত্যাগ করা গভর্নর ড. আতিউর রহমান। রিজার্ভ চুরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ককে দোষারোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিজ ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০০ ডলার তুলতে চাইলেও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। কিন্তু এখানে কোটি কোটি ডলার চলে যাচ্ছে, আর কোনো প্রশ্নই করা হচ্ছে না। নিউইয়র্ক ফেডের উচিত ছিল তত্ক্ষণাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বা এমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল নিরাপত্তা দুর্বল ছিল এমন দাবি বাতিল করে ড. আতিউর বলেন, সাইবার নিরাপত্তাকে আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এক বছর আগেই আমি নিরাপত্তার বিষয়টিকে ভবিষ্যৎ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য যে, এটি এখন উন্নত করা হচ্ছে। চুরির ঘটনার আগে ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরামর্শক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআইয়ের মালিকানাধীন ম্যানডিয়ান্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ঘটনা সংঘটনের আগে ম্যানডিয়ান্ট পুরোপুরি যোগ দিতে পারেনি। ড. আতিউর বলেন, একটি তদন্ত চলমান। আর সম্ভবত বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে কোনো অবহেলা থেকে থাকবে। কিন্তু তিনি নিজে কোনো ভুল কাজ করেননি দাবি করে বলেন, গভর্নর হিসেবে ছোট-বড় সবকিছুর দিকে নজর রাখা আমার কাজ নয়। হয়তো কারও পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে থাকবে। এ ব্যর্থতা সংশ্লিষ্ট বিভাগের, গভর্নরের নয়। এটি ছিল একটি বড় হামলা। অনেকটা রিখটার স্কেলে ১৫-এর মতো। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য জায়গাও বাংলাদেশকে সতর্ক ও সাহায্য করতে পারত। আপনি ভাবতেও পারবেন না, আমি কতটা আহত হয়েছি। ব্যাংকের অভ্যন্তরের কেউ অপরাধীদের সহায়তা করেছে, এমন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, যদি এমন কোনো অপরাধী থাকে, তবে তাকে ধরুন। কিন্তু কারণ ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করবেন না। ড. আতিউর দাবি করেন, নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (ফেড) ওই অর্থ স্থানান্তর নির্দেশনাগুলো ঠিকমতো যাচাই করে দেখেনি। তিনি বলেন, ফেডের দিক থেকে ভয়াবহ অদক্ষতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। আমরা ই-মেইল, ফ্যাক্স পাঠাচ্ছি, অথচ অন্য প্রান্ত থেকে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। আমাদের একটি হটলাইন প্রয়োজন।

ড. আতিউরের মতে, যদি ফেড সত্যি সাহায্য করতে চায়, তাহলে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে একটি ছোট ফোনকল দিয়ে অর্থ ফেরতের নির্দেশ দিতে পারে সংস্থাটি। পুরো সিস্টেমের বিশ্বাসযোগ্যতাই এখন প্রশ্নের অধীন। চুরির ঘটনার পর ব্যাংকের বৃহৎ স্বার্থ বিবেচনা করে তিনি পদত্যাগ করেন বলে জানান। চুরির ঘটনা গোপন রাখা প্রসঙ্গে আতিউর রহমান বলেন, আমি দেশের আর্থিক খাত ও ভাবমূর্তি রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। এটি একটি ভুল হতে পারে। কিন্তু এটি কোনো অপরাধ ছিল না। আমাকে কৌশলগতভাবে এতটা দক্ষ ভাবা উচিত নয়, যাতে আমি ঘটনার শুরু থেকেই জানব যে, কী ঘটতে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর